একাত্তরের স্বাধীনতাসংগ্রামকে দীর্ঘ ৫৩ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি তাদের দলীয় বয়ানে কুক্ষিগত করে কলঙ্কিত করেছিল। চব্বিশের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধকে কলঙ্কমুক্ত করে একাত্তরকে সর্বজনীন করা সম্ভব হয়েছে। একাত্তর সবার, একাত্তর কোনো দলের নয়।
আজ সোমবার দুপুরে মহান বিজয় দিবসে ‘বিজয় শোভাযাত্রা’ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এসব কথা বলেছেন।
আজ দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকা ঘুরে বেলা পৌনে দুইটার দিকে আবারও শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘একাত্তরে লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে অর্জিত হয়নি। লড়াই চলছে। চলমান এই লড়াইয়ের জন্য বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরে অনেক মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান সেই লড়াইয়ের উত্তরাধিকার। এই লড়াই আমরা শেষ করে ছাড়ব। আমাদের যে পূর্বপুরুষদের ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের আমরা সামনে নিয়ে আসব। তাঁদের অনুপ্রেরণাকে সামনে রেখে আমরা হয় দেশকে মুক্ত করব, নয়তো শহীদ হব, ইনশা আল্লাহ।’
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য রশিদুল ইসলাম রিফাত (রিফাত রশীদ) বলেন, ‘এবারের বিজয় দিবস অন্য যেকোনোবারের চেয়ে অনেক আলাদা। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে বিজয় দিবসে আমরা আর্তনাদ করতাম এই ভেবে যে সত্যিকারের বিজয় আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। ফ্যাসিবাদীরা মুক্তিযুদ্ধকে তাদের ফ্যাসিবাদী বয়ান দিয়ে কুক্ষিগত করে কলঙ্কিত করেছিল। চব্বিশের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধকে কলঙ্কমুক্ত করে একাত্তরকে সর্বজনীন করতে সক্ষম হয়েছি। একাত্তর আমাদের সবার, কোনো ফ্যাসিস্ট, তার ছেলেমেয়ে বা বাপের না। একাত্তর কোনো দলের নয়।’
এ সময় বিজয় দিবসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া পোস্টের সমালোচনা করে রিফাত রশীদ 'শেইম’ ‘শেইম’ উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, মোদির হাতে গুজরাটের রক্ত লেগে আছে। বাংলাদেশের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে চোখ উপড়ে ফেলব।
এর আগে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদল। এরপর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেছে তারা।
আজ বাদ মাগরিব রাজধানীর বাংলামোটরে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহত ব্যক্তিদের সুস্থতা কামনায় দোয়া-মোনাজাত করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।