নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মবার্ষিকী ছিল ১৩ নভেম্বর। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বিকেলে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ‘হুমায়ূন আহমেদ ও বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত’ প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র। তিনি বলেন, নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে হুমায়ূন মধ্যবিত্তের অনেক ট্যাবু ভেঙে এমন বিস্তার ঘটিয়েছেন, এমন কিছু আনন্দের সন্ধান দিয়েছেন; যা ছিল নতুন। এ জন্যই হুমায়ূন জনপ্রিয় হয়েছেন।
সালাহ উদ্দিন শুভ্র আরও বলেন, তাঁর (হুমায়ূন আহমেদ) লেখায় অনেক বড় ল্যান্ডস্কেপ পাওয়া যায় না। তবে যে গণ্ডি তিনি আঁকেন, সেখানে মধ্যবিত্তের জীবনের বিস্ময়কে ব্যবহার করেন। হুমায়ূন আহমেদ মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমানকে নিজের গল্প, উপন্যাস ও নাটকে কেমন করে আধুনিক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সে উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক আহমেদ মওলা বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে যেভাবে পাঠ করা দরকার, সেভাবে পাঠ করা হয়নি। এর কারণ হয়তো তিনি অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। জনপ্রিয় শব্দের সমস্যা হচ্ছে, এর যে অর্থ তা সাহিত্যের একাডেমিক ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হলে ব্যাখ্যা বদলে যায়। জনপ্রিয় মানে যেন তাঁর লেখায় গভীর কিছু নেই, এমন একটি ধারণা পাওয়া যায়। হুমায়ূন আহমেদ আসলে ছিলেন পাঠকপ্রিয়।
কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের একমাত্র থ্রিল হচ্ছে মধ্যবিত্ত বিব্রত হচ্ছে কি না, সে দিকটি। এমন একটি উপলক্ষ তিনি হাজির করেন যে পাঠক শেষ পর্যন্ত জানতে চায় সেই মধ্যবিত্ত আসলেই বিব্রত হয়েছে কি না। এভাবেই পুরো উপন্যাসটা পড়া হয়ে যায়।’
সুমন রহমান উল্লেখ করেন, পাঠ্যপুস্তকে বা শ্রেণিকক্ষে শেখানো উপন্যাসের যে ন্যারেটিভ (বয়ান), এর মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস স্থান পায় না। হুমায়ূন আহমেদের লেখা হচ্ছে ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্তের গল্প; কিন্তু তাতে কি সে পশ্চাৎপদ? মোটেও না।
হুমায়ূন আহমেদের লেখার নন্দনতত্ত্ব ও দর্শন দুটি দিক নিয়েই আলোচনা করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম। তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ এখনো যথেষ্ট অপঠিত লেখক। কারণ, আমাদের পাঠ-পরিসরে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হতে দেখা যায় না।’
মোহাম্মদ আজম আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদের লেখাকে নানান দিক থেকে দেখার সুযোগ আছে। তিনি সাহিত্যে লিবারিজম প্রসঙ্গে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের লেখার তুলনা করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির পরিচালক সরকার আমিন বলেন, স্বাধীনতার পর সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিক ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সব মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এক আনন্দের নাম। অসুখী বাংলাদেশে হুমায়ূন আহমেদকে পড়ার সময় নিজেকে সুখী বোধ হয়। হুমায়ূন আহমেদ মধ্যবিত্তের আশ্রয় তৈরি করেছিলেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মাহবুবা রহমান। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ২০১২ সালে তিনি প্রয়াত হন।