ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। এতে রাজধানী ঢাকায় এই ধরনের ‘অবৈধ’ যানবাহনের চলাচল বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শুধু ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী এই অনুমতি দিয়েছেন বলেন তিনি জানান।
সড়ক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্বে থাকা সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের গত বুধবারের সভায় ঢাকায় ব্যাটারি ও ইঞ্জিনচালিত রিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত জানান ওবায়দুল কাদের। উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি তিনি। এই কমিটিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র, সরকারের আটটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ঢাকার দুই মেয়র ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা নিয়ে বক্তব্য দেন। এরপরই তা বন্ধের সিদ্ধান্ত আসে।
এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশ ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে। গত রোববার ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে রাজধানীর মিরপুরে দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এই যানের চালকেরা। বিক্ষোভকারীরা কালশী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের একটি বক্স পুড়িয়ে দেন। ভাঙচুর করেন অন্তত ১০টি যানবাহন। পুলিশও কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে ব্যাটারি-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ। তারা সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এর মধ্যেই ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতির ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের অবশ্য জানিয়েছেন, মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন নীতিমালা নিয়ে আসছি, জীবিকা আগে না জীবন আগে। যদি ট্রাক ও বাসের সাথে ইজিবাইকের সংঘর্ষ হয়, তাহলে বাসের কারও কিছু হয় না। ইজিবাইকের ড্রাইভারসহ দশ থেকে বারোজন যাত্রীর সবাই নিহত হন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এই অবস্থায় আমরা ২২টি মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত যান বন্ধ করেছি। কিন্তু ঢাকা সিটিতে এই দুর্মূল্যের বাজারে নিম্ন আয়ের, স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্টের ও দুঃখের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, অন্যান্য সিদ্ধান্ত ঠিক আছে কিন্তু ঢাকা সিটিতে এই মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞার দরকার নেই।’
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার প্রকৃত সংখ্যা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নেই। সংস্থাটি সারা দেশে নিজেদের কার্যালয়ের মাধ্যমে পৌনে চার লাখের মতো নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার হিসাব বের করেছে। তবে পুলিশ ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ধারণা, ঢাকাসহ সারা দেশে এ ধরনের ৬০ লাখের বেশি যান রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় এই সংখ্যা তিন থেকে পাঁচ লাখের মতো।
বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, যন্ত্রের মাধ্যমে চলে এমন যানবাহনের অনুমোদন দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার বিআরটিএর। আর রিকশার অনুমোদন দেয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ। নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ব্যাটারিচালিত রিকশাকে যানবাহনের মর্যাদা দেয়নি বিআরটিএ। এসব যানের কোনো নিবন্ধন নেই। এগুলোর নিবন্ধন, চলাচলের অনুমতি কিংবা এর চালকের কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। ফলে এসব যান অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত এক সপ্তাহের মধ্যে সরে আসা ঠিক হয়নি। বিশেষ করে ঢাকায় এসব অবৈধ যান চলতে পারবে—এমন নির্দেশনার মাধ্যমে আসলে একধরনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এখন আরও দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অবৈধ এসব যানবাহন নামাবেন মালিকেরা।