মুক্তবুদ্ধিচর্চার অনেক প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে: সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারাছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

দেশে মুক্তবুদ্ধিচর্চার অনেক প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ধরনের অবস্থা কোনো জাতির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না।

শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে খান সারওয়ার মুরশিদ জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটি।

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটা খারাপ সময় পার করছি—যখন সাংস্কৃতিক শক্তি ক্রমেই ভয় পাচ্ছে, যখন মুক্তবুদ্ধিচর্চার অনেক প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে, যখন সাংস্কৃতিক ও রুচির ওপর নৈরাজ্যের দৃষ্টি পড়েছে, যখন শিক্ষার মান ক্রমাগত নামছে এবং সেটি একেবারেই মুখস্থভিত্তিক পরীক্ষানির্ভর হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যেখানে চাকরি খুঁজে পাওয়া একজন শিক্ষার্থীর জীবনে প্রধান চিন্তা। এ ধরনের অবস্থা কোনো জাতির জন্য ভালো এনে দেয় না।’

প্রয়াত অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ ছিলেন ‘নিউ ভ্যালুজ’ জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। খান সারওয়ার মুরশিদ শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি ‘পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালের’ প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন উল্লেখ করে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠ দেবেন, তা নয়; তিনি জনরুচি গঠনেও একটা ভূমিকা পালন করবেন। তরুণদের উজ্জীবিত করবেন। গঠনমূলক অনেক কাজে নিয়োজিত থাকবেন।’

নিউ ভ্যালুজের মাপের কাগজ এখন দেশে নেই বলেও মনে করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এমন কাগজ পেতে হলে এখন ভারতে, পশ্চিমে যেতে হবে। আমাদের সংস্কৃতি এ ধরনের একটি কাগজ ধারণ করত, সেটি আমার অবাক লাগে। সেখানে যে ধরনের প্রবন্ধ সংকলিত হতো, সেগুলোর মান অকল্পনীয় ছিল।’ নিউ ভ্যালুজের সব কটি সংখ্যা একত্র করে সংকলন করার ওপর জোর দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক পারভীন হাসান। তাঁর শিক্ষক ছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ।

পারভীন হাসান আজ খান সারওয়ার মুরশিদের সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘সেটি কালো সময় হলেও আমরা অনেক কিছু বলতে পারতাম, যেটা আমরা এখন বলতে পারব না। এমনকি আমরা পাঠ্যক্রমে অনেক কিছু ঢোকাতে সাহস পাই না যে পাছে কিছু হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মানে সারা বিশ্বের সবকিছু পড়বে, সবকিছু জানব। তাঁদের সময় তো অনেক বৈপ্লবিক চিন্তা হয়েছে, যা এখন অনেকেই ভাবতেই পারেন না।’

অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা ও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খান সারওয়ার মুরশিদের মেয়ে শারমীন মুরশিদ।

তিনি বলেন, ‘তাঁর (খান সারওয়ার মুরশিদ) প্রজন্মের প্রাসঙ্গিকতা আমাদের সমাজে গভীর। তরুণ সমাজ যেন জানতে পারে সেই প্রজন্মের মূল্যবোধ ও সাহিত্যচর্চাকে। এ প্রজন্ম যেন জানে, তাদের পূর্বসূরিরা কারা, কে ছিলেন। আমাদের অনেক কালো ইতিহাস আছে। কিন্তু সেটার ভেতরে যে সুন্দর বিকাশগুলো আছে, সেগুলোকে স্পর্শ করুক আমাদের এই প্রজন্ম।’

এ আয়োজনে অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত লেখা সংরক্ষণের ওপর জোর দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ফকরুল আলম।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন।

খান সারওয়ার মুরশিদের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে গত জুন মাসে ২৪ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়, যার আহ্বায়ক অধ্যাপক ফকরুল আলম। আজকের সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তাঁর জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন শুরু হলো।