ইউল্যাব উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) উপাচার্য ইমরান রহমানের অনতিবিলম্বে পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে অসম্মান এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা ইউল্যাব উপাচার্যের অনতিবিলম্বে পদত্যাগ চাইছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় ইউল্যাবের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
অনশনে অংশ নেওয়া ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। স্লোগানে স্লোগানে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছেন।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ইউল্যাব প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবিকে উপেক্ষা করে ‘ফ্যাসিবাদী’ আচরণ বজায় রেখেছে। উপাচার্যের নেতৃত্বে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি, গ্রাফিতি আঁকার কারণে শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদান ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ বিনষ্ট করা হয়েছে।
ইউল্যাবের উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা অনশন করছেন। অন্য দাবিগুলো হলো—ফ্যাসিবাদের দোসর ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। ডিসিপ্লিনারি কমিটি ও প্রক্টরিয়াল বডির সবাইকে ছাত্রবিরোধী সিদ্ধান্তের দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। শিক্ষার্থীসহ সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ইউল্যাবের কোড অব কনডাক্ট যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। মুক্তচিন্তা, মতপ্রকাশ ও ব্যক্তিস্বাধীনতাকে হরণ করে—এমন সব কালাকানুন ইউল্যাবের বিধিবিধান থেকে বিলোপ করতে হবে।
এর আগে গতকাল বুধবার একই দাবিতে ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা বছিলা ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
ইউল্যাব প্রাঙ্গণে গ্রাফিতি আঁকায় গত মাসে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করা হয় বলে জানা যায়। এই ঘটনার জেরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।
আন্দোলনে থাকা মো. মাহির ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই ক্যাম্পাসের সামনে ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা মার খাচ্ছিলেন। তখন শিক্ষার্থীরা বাঁচতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে ইউল্যাবের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা বলেন, ‘বড় সাহেবের অর্ডার আছে, ফটক খোলা যাবে না।’ পরে সরকার পতন হলে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষার্থীরা জানতে চান, সেই ‘বড় সাহেব’ কে? এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ। যেসব শিক্ষার্থী ‘বড় সাহেব’ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১২ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে নানা কারণ দেখিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনি নিজেও (মাহির) আছেন। তাঁকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
অনশনে থাকা আরেক শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক বলেন, সম্প্রতি গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি আঁকায় দুই শিক্ষার্থীকে ‘সাসপেন্ড’ করার উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে গতকাল বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে তাঁরা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। বেলা তিনটার পর উপাচার্যের প্রতিনিধিদল এসে দাবি না মেনে আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেয়। তখন থেকে তাঁরা ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করেন। এর মধ্যে তাঁদের সঙ্গে উপাচার্য যোগাযোগ করেননি। গতকাল দিবাগত রাত ১২টায় তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ট্রাস্টি বোর্ডের দুই সদস্যকে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টার মধ্যে পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দেন। আজ ১২টার মধ্যে এ দাবি না মানায় তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন।