শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু বাড়ছে

হাসপাতালের শয্যায় মায়ের কোলে শুয়ে মুঠোফোনে কার্টুন দেখছিল ১৩ মাস বয়সী আয়াতুল্লাহ মুশফিরা হুমায়রা। নতুন মানুষ দেখলেই কান্না শুরু করছিল সে। মা মনিরা সিদ্দিকা জানালেন, হুমায়রাকে কয়েকবার ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। আবার ইনজেকশন দেওয়া হবে ভেবে নতুন কাউকে দেখলেই কেঁদে উঠছে সে।

হুমায়রা রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) নিউমোনিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। ১৬ জানুয়ারি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে নরসিংদী সদর হাসপাতালে এক দিন চিকিৎসাধীন ছিল।

তীব্র শীতে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে। শিশু ও বয়স্ক রোগীর চাপ বেশি। হাসপাতালের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারেও এমন রোগী বেশি।

গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের নিউমোনিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডটির ১৬টি শয্যার সব কটিতেই রোগী রয়েছে। এ ছাড়া তিনটি কেবিনের সব কটিতে রোগী রয়েছে বলে জানালেন ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা দুজন নার্স। ওয়ার্ডের বাইরে রোগীর স্বজনদের ভিড়। এ ছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারে রোগী নিয়ে যাওয়া স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক ফারহানা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর (শিশু) সংখ্যা বাড়ছে। সংখ্যাটি গত মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। নিউমোনিয়া, অ্যালার্জি, ফ্লু আক্রান্ত রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক রোগী হাসপাতালে আসছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগীর সংখ্যা এখন তুলনামূলক কম থাকায় রোগী ভর্তি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না।

৩৯ ভাগ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত

রাজধানীর মিরপুরে ডা. এম আর খান শিশু হাসপাতালে ২৪০টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ১৬৪। এর মধ্যে ৬৫ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত, যা হাসপাতালটিতে মোট ভর্তি রোগীর ৩৯ দশমিক ৬৪ ভাগ।

হাসপাতালটির উপপরিচালক (প্রশাসন) জান্নাত আলী বলেন, ডেঙ্গুতে যেমন রোগী ভর্তি ছিল, সেই তুলনায় ঠান্ডার কারণে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে।

ঢাকার বাইরের চিত্র

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের আধুনিক সদর হাসপাতালে গতকাল গিয়ে জানা যায়, ১০০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে ২০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৭, নারী ৬৭ এবং নবজাতক ও শিশুর সংখ্যা ৮২।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ৬২ রোগীর মধ্যে বেশির ভাগই ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এ ছাড়া কিছু শিশু সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন শীতজনিত অন্য রোগে আক্রান্ত। আর নবজাতক পরিচর্যাকেন্দ্রে ভর্তি ২০টি নবজাতক প্রায় একই ধরনের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের মেঝেতে বিছানা দেওয়ার পাশাপাশি বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের বারান্দায় কথা হয় সুরভী আক্তারের সঙ্গে। তিনি ডায়রিয়া আক্রান্ত ২১ মাস বয়সী ছেলে জাবিরকে নিয়ে তিন দিন ধরে এখানে আছেন। জাবিরের অবস্থা এখন একটু ভালোর দিকে।

পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, শিশুর সংখ্যাই বেশি। বেশির ভাগই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।

টানা কয়েক দিনের মৃদু শৈত্যপ্রবাহে রোগী বাড়ছে নাটোরেও। নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিনে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা গড়ে এক হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ রোগী শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে আসছে।

ঘন কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ। ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে গতকাল রোগী ভর্তি ছিল ৩৮০ জন। এর মধ্যে ১২ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪৮ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৮১ রোগী।

১০০ শয্যাবিশিষ্ট চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শুধু ডায়রিয়ার রোগীই ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল এ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৫৮। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৫৬।

নওগাঁয় টানা তিন দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ২৫০ শয্যার নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৬০ রোগী ভর্তি ছিল। শয্যা না পেয়ে অনেক রোগী মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]