হত্যার রাজনীতি যেন বাংলাদেশে আর ফিরে না আসে

‘বুদ্ধি হত্যার পরম্পরা: ’৭১-’২৪’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বরছবি: প্রথম আলো

বুদ্ধিজীবী হত্যা বা অন্য যেকোনো নামেই হোক, হত্যার রাজনীতি যেন বাংলাদেশে আর ফিরে না আসে। সব ধর্ম–বর্ণ–সম্প্রদায়ের মানুষ যেন একটি নিরাপদ সমাজে বসবাস করতে পারে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে ‘বুদ্ধি হত্যার পরম্পরা: ’৭১-’২৪’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভার শুরুতে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল। তিনি বলেন, ১৯৭১–এর ১৪ ডিসেম্বরকে দেখতে হবে শত শত বছরের কলোনিয়াল শাসনে উদ্ভূত স্থানীয় জ্ঞানকাণ্ড ও বুদ্ধিচর্চা হত্যার ঐতিহাসিক প্রবণতার মধ্যে, যে প্রবণতা আওয়ামী সরকার ১৯৭২-৭৫ এবং গত ১৫ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে চলমান রেখেছিল।

আরিফ সোহেল আরও বলেন, ‘সেই প্রবণতা (বুদ্ধিচর্চা হত্যার ঐতিহাসিক প্রবণতা) একটি পর্যায়ে এসে গায়ের জোরে রূপ নেয়, যা এখনো আমাদের সমাজের মধ্যে বিদ্যমান আছে। এটিকে যদি দূর করতে না পারি তাহলে ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ বিফলে যাবে। জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থান যদি কোনোভাবে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে চলে যেত, যেটা হওয়ার প্রবল সম্ভবনাও ছিল, তাহলে আওয়ামী সরকার হয়তো আরেকটি বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা ঘটাতে পারত।’

আলোচনা সভায় অংশ নেন লেখক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে হত্যার যে রাজনীতি আছে, সেটি বুদ্ধিজীবী হত্যা বা অন্য যেকোনো নামেই হোক, এই হত্যার রাজনীতি যেন বাংলাদেশে আর ফেরত না আসে। সব ধর্ম–বর্ণ–সম্প্রদায়ের মানুষ আমরা যেন একটি নিরাপদ সমাজে বসবাস করতে পারি।’

সারোয়ার তুষার বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা দেখছি, শিক্ষার্থীদের গুপ্তহত্যা করা হচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’ তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সমালোচনা করেন।

সারোয়ার তুষার আরও বলেন, বিরল ব্যতিক্রম বাদ দিলে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা একটি বিশেষ দলের সাংস্কৃতিক খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন। অবৈধ শাসনের পক্ষে ওকালতি করেছেন। ভিন্নমত ও বুদ্ধিজীবী দমনে আওয়ামী লীগ কুখ্যাত। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিসর উন্মুক্ত হয়েছে। এই পরিসর ধরে রাখতে হলে বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকল্প হাজির করা। দলীয় বা গোষ্ঠীস্বার্থ নয়; জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে বুদ্ধিজীবীদের।

আলোচনা সভায় লেখক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য তুহিন খান বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি পুরোনো যেই ন্যারেটিভের রাজনীতি ছিল সেগুলো আবার নানাভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। শাহবাগী বনাম রাজাকার বয়ানের যে রাজনীতি, সেটিই আবার সেন্ট্রাল ডিবেট হয়ে উঠছে আমাদের। সেই ট্যাগিংয়ের রাজনীতিগুলো আমরা আবার দেখতে পাচ্ছি। ফিরে আসাটা অ্যালার্মিং। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করা উচিত।’

তুহিন খান আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যার ন্যারেটিভকে পকেটস্থ করে নিজেরাই একটি বুদ্ধিহত্যার কারখানা তৈরি করেছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা সেই ন্যারেটিভ ভেঙে দিয়েছি। ’৭১ ও ২৪’–এর চিন্তাহত্যাকারীদের রাজনীতি এ দেশের মানুষ নানাভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। আশা করি, সামনের দিনে আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারব।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য লুৎফর রহমান। সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান।