ট্রেনের ১২০০ টিকিট উদ্ধার, কালোবাজারি চক্রের ১৪ সদস্য গ্রেপ্তার
রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১ হাজার ২০০–এর বেশি ট্রেনের টিকিট উদ্ধারের পাশাপাশি কালোবাজারির অভিযোগে একটি চক্রের ১৪ জনকে গ্রেপ্তারের করার কথা জানিয়েছে র্যাব। টিকিটগুলো অবৈধভাবে সংগ্রহ ও মজুত করা হয়েছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন বা রেলস্টেশনের কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু কালোবাজারে অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রি হতে দেখা যায়। কালোবাজারিরা বিভিন্ন কৌশলে ট্রেনের টিকিট অগ্রিম সংগ্রহ করে নিজেদের কাছে মজুত রাখেন। তারপর সাধারণ যাত্রীদের কাছে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. সেলিম (৫০), উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), আনোয়ার হোসেন ওরফে কাশেম (৬২), অবনী সরকার সুমন (৩৫), হারুন মিয়া (৬০), মো. মান্নান (৫০), আনোয়ার হোসেন ডাবলু (৫০), মো. ফারুক (৬২), শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), মো. জুয়েল (২৩), আবদুর রহিম (৩২), মোর্শিদ মিয়া ওরফে জাকির (৪৫), আবদুল আলী (২২) ও জোবায়ের (২৫)।
তাঁদের মধ্যে সেলিম কমলাপুরে এবং উত্তম বিমানবন্দর এলাকায় কালোবাজারে টিকিট বিক্রির মূল হোতা।
র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সরাসরি ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ নামের দুটি ট্রেন যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ এই ভ্রমণে নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রার জন্য এ রুটে ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্যও বেড়ে যায়। অনলাইনে বা কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যায় এই রুটের ট্রেনের টিকিট। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমে দুটি চক্রের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব বলছে, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মহানগর প্রভাতী, তূর্ণা নিশীথা, চট্টলা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করছিল। চক্রের সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ যাত্রী, রেলস্টেশনের কুলিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করেন। ৪টি টিকিট কেনার বিনিময়ে তাঁদের ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো। ওই চক্রের সদস্যরা কাউন্টারে থাকা কিছু অসাধু টিকিট বুকিং কর্মচারীদের দিয়ে সাধারণ যাত্রীদের (টিকিট কাটার সময় দেওয়া) জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে রাখেন। পরে এসব পরিচয়পত্র ব্যবহার করে চারটি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করেন। এভাবে চক্রটি প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক টিকিট সংগ্রহ করত।
র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা রেলস্টেশনে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারী এবং অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত ভেন্ডার প্রতিষ্ঠান সহজ ডট কমের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভার কক্ষে কর্মরত ব্যক্তিদের সহযোগিতা নিতেন। অসাধু কর্মচারীদের সহায়তায় যাত্রীদের সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ব্যবহার করে, এমনকি সার্ভার ডাউন করে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকিট কেটে সেগুলো তাঁদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতেন। বিশেষ করে ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক চুটিসহ বিশেষ ছুটির দিন উপলক্ষ করে তাঁরা আরও বেশি টিকিট সংগ্রহ করতেন। বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ নিতেন গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডট কমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হতো।