কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ) এলাকায় সাড়ে ১৯ হাজারের বেশি কর্মী নিয়োজিত থাকবেন। ঈদের দিন বেলা দুইটা থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হবে। উত্তর সিটি ৬ ঘণ্টার মধ্যে এবং দক্ষিণ সিটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছে।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন এলাকায় বর্জ্য অপসারণে কাজ করবেন ১০ হাজার ২৫৭ জন কর্মী। আর ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন এলাকায় এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন ৯ হাজার ৩৩৭ জন কর্মী।
দুই সিটির এই ১৯ হাজার কর্মীর মধ্যে ৮ হাজার ৭০০ জনই প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারস (পিডব্লিওসিএসপি) বা ভ্যান সার্ভিসের কর্মী। যাঁরা মূলত টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এর বাইরে প্রায় ১ হাজার ২০০ কর্মী ওই দিনের জন্য দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে। বাকি ৯ হাজার ৭০০ কর্মী দুই সিটিতে কাজ করা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, বর্জ্য অপসারণের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় দক্ষিণ সিটির প্রতিটি অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকা থেকে অনলাইনে যুক্ত হবেন। অনলাইনে যুক্ত হবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসও। পরে বেলা ২টায় অপসারণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
আর ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, মিরপুরের প্যারিস রোড মাঠে কোরবানির জন্য জায়গা নির্ধারিত করা হয়েছে। গোলারটেক মাঠে ঈদের জামাত শেষে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম ওই মাঠে গিয়ে কোরবানির কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শনে যাবেন। পরিদর্শনের সময়ই যেকোনো ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে দুপুরে খাবার খাবেন। শেষে বেলা দুইটার দিকে যেকোনো একটি ওয়ার্ড এলাকা থেকে বর্জ্য অপসারণ কাজের উদ্বোধন করবেন।
কোরবানির হাট ও পশুর বর্জ্য অপসারণ তদারকিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হল থেকে এ নিয়ন্ত্রণকক্ষ পরিচালিত হবে। ঈদের দিন বেলা দুইটা থেকে পরদিন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে মাঠে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয় করা হবে। এ ছাড়া বর্জ্য যথাসময়ে অপসারণ না হলে বাসিন্দারা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ এবং ০২২২৩৩৮৬০১৪ নম্বরে ফোন করে তথ্য ও অভিযোগ জানতে পারবেন।
এর বাইরে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা যেখানে-সেখানে অস্থায়ী বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধে ছয়জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছে। কোরবানির পশুর হাট ও কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কাজ তদারকির জন্য দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ ১০টি দল গঠন করেছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষও। বাসিন্দারা বর্জ্য অপসারণ কাজ নিয়ে যেকোনো তথ্য কিংবা অভিযোগ সিটি করপোরেশনের ১৬১০৬ নম্বরে কল করে জানাতে পারবেন। পাশাপাশি ওয়ার্ড ও অঞ্চলভিত্তিক তদারকি দলও গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া মিরপুরের প্যারিস রোড মাঠে পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত করা জায়গায় কোরবানি দিলে প্রণোদনা হিসেবে গরু প্রতি এক হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি। এর বাইরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডেও অন্তত ১০০টি পশু একসঙ্গে কোরবানি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কোরবানির হাটের বর্জ্য ও কোরবানির পশুর বর্জ্য পৃথকভাবে অপসারণ কাজ করবে। কোরবানির বর্জ্য অপসারণে তাদের ৫৬০টি যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত থাকবে। আর হাটের বর্জ্য অপসারণে ৫৭টি ডাম্প ট্রাক, ১২টি পে-লোডার ও ১১টি টায়ার ডোজার নিয়োজিত করা হবে। আর ঢাকা উত্তর সিটি বিভিন্ন এলাকায় ৫২০টি ভারী যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া দুই সিটিতেই পলিব্যাগ, ব্লিচিং পাউডার, স্যাভলন, টুকরি ও ফিনাইল বিতরণ করা হয়েছে।