আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল
বুলডোজার লাগেনি, কথাতেই কাজ
উচ্ছেদ অভিযানে স্থাপনাগুলো ভাঙা হলে ক্ষতি বেশি হবে, তাই নিজ উদ্যোগেই সেগুলো ভাঙার কাজ শুরু করেছেন দখলদারেরা।
প্রায় সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ চ্যানেল ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
চ্যানেল পুনরুদ্ধারে প্রাথমিকভাবে ২৮টি বড় স্থাপনা চিহ্নিত করেছে ডিএসসিসি।
সাধারণত উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে দখলদারের সঙ্গে অভিযান পরিচালনাকারী দলের সদস্যদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। তবে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল উদ্ধার অভিযানে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। ভারী যান-যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়া হলেও সেগুলো ব্যবহারের দরকার হয়নি। দখলদারেরা নিজ দায়িত্বে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলার কথা জানান। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছেন তাঁরা।
আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধারে প্রাথমিকভাবে ২৮টি বড় স্থাপনা চিহ্নিত করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এসব স্থাপনার মধ্যে ১০ তলা আবাসিক ভবনও রয়েছে। অভিযানের মাধ্যমে এসব ভবন ভাঙা হলে ক্ষতি বেশি হবে, তাই নিজ উদ্যোগেই সেগুলো ভাঙার কাজ শুরু করেছেন দখলদারেরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেলের দুই পাশে অন্তত ২০০ দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আরও কিছু এলাকায় দখলদার চিহ্নিত করার কাজ চলছে। গত রোববার থেকে তাঁরা অভিযানে নেমেছেন। তবে তাঁরা বলার পর স্থাপনার মালিকেরা নিজ উদ্যোগে অবৈধ ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেছেন।
আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের সীমানা কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত। প্রায় সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই চ্যানেলের অনেক অংশ ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানোর পাশাপাশি গত জুন থেকে চ্যানেলটির খননকাজও শুরু হয়েছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুর এলাকায় নিজ উদ্যোগে বহুতল ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেছেন মেটাডোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির তিনটি ভবনের কিছু অংশ চ্যানেলের জায়গায় পড়েছে। এর পাশেই মেটাডোর অ্যামিউজমেন্ট পার্কের কিছু জায়গাও চ্যানেলের মধ্যে পড়েছে।
জানতে চাইলে মেটাডোর গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার এস এম আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন ভাঙলে ক্ষতি বেশি হবে। তাই নিজ উদ্যোগেই ভবন ভাঙার কাজ শুরু করা হয়েছে।
যাঁরা চ্যানেলের জায়গা দখল করে রেখেছেন বা যাঁদের দখলে জমি পড়েছে, তাঁরা বাদে উচ্ছেদ অভিযানে সবাই খুশি।মোহাম্মদ হোসেন, পশ্চিম রসুলপুর এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর
পশ্চিম রসুলপুরে পান্না গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন কয়েকটি ভবনের মালিকেরা নিজ উদ্যোগে বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের বর্তমান তীর থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত যেসব স্থাপনা রয়েছে, তা ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া অবৈধভাবে নির্মিত একটি কালভার্ট ভাঙার কাজও শুরু করেছে দক্ষিণ সিটি।
লোকজন নিজেরাই নিজেদের ভবন ভেঙে দিচ্ছেন উল্লেখ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরীন প্রথম আলোকে বলেন, চ্যানেলের তীরে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার পর হাঁটার পথ নির্মাণ করা হবে।
পশ্চিম রসুলপুর এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা চ্যানেলের জায়গা দখল করে রেখেছেন বা যাঁদের দখলে জমি পড়েছে, তাঁরা বাদে উচ্ছেদ অভিযানে সবাই খুশি।
দৃশ্যমান হচ্ছে নৌপথও
প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল খননের কাজ শুরুর পর গত সাড়ে তিন মাসে অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে। দখল–দূষণে মৃতপ্রায় চ্যানেলটিতে এখন পানির প্রবাহ ফিরতে শুরু করেছে। শহীদনগর এলাকার বাসিন্দা রোকেয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো সংস্থার নিয়ন্ত্রণের না থাকার কারণে বুড়িগঙ্গা চ্যানেলটির প্রায় মৃত্যু হতে যাচ্ছিল। বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে পুরোনো রূপেই ফিরবে চ্যানেল। এই কাজ দ্রুত শেষ করে চ্যানেলটি দৃষ্টিনন্দন করার অনুরোধ জানান তিনি।