মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টারের থাবা
রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর মোড়ে মেট্রোরেলের ২৪৮ নম্বর পিলার। সেখানে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের একটি সতর্কবার্তা রয়েছে। বার্তায় লেখা, মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ।
অথচ এই পিলারটিতেই পোস্টার লাগানো হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খোকন সরকারের সৌজন্যে পোস্টারটি করা। এতে দলীয় চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থর পক্ষ থেকে দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
কেবল বিজেপি নয়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পোস্টারে ছেয়ে গেছে মেট্রোরেলের পিলারগুলো।
এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানো হয়েছে। এতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের বিভিন্ন পিলারে পোস্টার, পোস্টারের ছেঁড়া অংশ দেখা যায়।
ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত প্রতিটি পিলারে জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদের (মিলন) সৌজন্যে পোস্টার দেখা যায়। এতে দলটির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সাফল্য কামনা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁদের দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তাঁদের শুধু বৈদ্যুতিক খুঁটিতে পোস্টার লাগাতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা মেট্রোরেলের পিলারেও পোস্টার লাগিয়েছেন। এতে আমি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। ইতিমধ্যে আগারগাঁও, মতিঝিল, হাইকোর্ট-সংলগ্ন এলাকার পিলার থেকে পোস্টার সরিয়েছি। ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত এলাকার পিলারে পোস্টার লাগানোর বিষয়টি আমি জানতাম না। ভবিষ্যতে আর পিলারে পোস্টার লাগাব না।’
কারওয়ান বাজার এলাকার পিলারে ঢাকা মহানগর উত্তর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কাজী শাহ আলমের পক্ষে পোস্টার লাগানো হয়েছে। এতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি রয়েছে।
ফার্মগেট এলাকার পিলারে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, বাড়িভাড়া, হোস্টেলভাড়া, ধর্মীয় সম্মেলনের পোস্টার দেখা গেছে।
মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানোর বিষয়টি সচেতন নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এ নিয়ে অনেকে ফেসবুকেও লিখেছেন।
গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজার এলাকায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী খাইরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পোস্টার লাগিয়ে মেট্রোরেলের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এগুলো ঠিক নয়।
সরেজমিন দেখা যায়, খামারবাড়ি এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারে ছাত্রলীগ ও মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের পোস্টার রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পোস্টারের ছেঁড়া অংশ এখনো পিলারে রয়ে গেছে।
আগারগাঁওয়ে মেট্রোরেলের পিলারে একটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পোস্টার রয়েছে। আছে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পোস্টার।
মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার পিলারে বিজেপি, ছাত্রলীগ ও দুদকের পোস্টার লাগানো রয়েছে। সেখানে ফুরফুরা দরবার শরীফের পোস্টারও দেখা যায়।
মিরপুর এলাকায় মেট্রোরেলের একাধিক কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি তাঁরা পিলারে লাগানো সব ধরনের পোস্টার তুলেছিলেন। কিন্তু আবার নতুন করে পোস্টার লাগানো হচ্ছে।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ-পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিলারে পোস্টার লাগালে এখন আমরা তা তুলে ফেলব। আমাদের এই কাজ অব্যাহত থাকবে। এভাবে আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করব। একপর্যায়ে গিয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণে আইন রয়েছে। দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১২ অনুসরণের জন্য তারা সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছে। কেউ বিধি লঙ্ঘন করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেলের পিলার যদি পোস্টারে ভরে যায়, তাহলে এই শহর কীভাবে সুন্দর হবে? কোনো ধরনের পোস্টার যাতে লাগানো না হয়, সে জন্য তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন। এখন গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। পরে অভিযানে নামবেন।