মহাখালী বাস টার্মিনালে টিকিট পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে

মহাখালীতে এনা পরিবহনের বাসের সামনে টিকিটপ্রত্যাশী মানুষের দীর্ঘ সারিছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা আরাফাত আলী। ঈদে গ্রামে স্বজনদের কাছে যাবেন। তাই বেলা ১১টার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালে ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের টিকিট বিক্রির সারিতে দাঁড়ান তিনি। বেলা ১টার দিকে আরাফাতের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন এনা কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিল। আর আরাফাতের সামনে তখন আরও প্রায় ১৫ জন সারিতে দাঁড়ানো ছিলেন।

আরাফাত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের সময়ও এনা পরিবহনের বাসভাড়া বাড়ে না। স্বাভাবিক সময়ে যে ৩১০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়, ঈদেও ওই ভাড়াই থাকে। তাই কষ্ট হলও এনার টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।’ তবে এই বাসের জন্য যাত্রীর চাপ অনেক বেশি থাকায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়েও টিকিট কেনার সুযোগ পাননি বলে জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, এনা পরিবহনের ময়মনসিংহ বাস কাউন্টারের দুই দিকে নারী ও পুরুষের পৃথক দুটি সারি। পুরুষদের সারিতে প্রায় ১৪০ জন দাঁড়িয়ে আছেন। সারি চলে গেছে টার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্ত (এনা ময়মনসিংহ কাউন্টার) থেকে উত্তর দিকে মূল টার্মিনাল ভবনের কাছাকাছি পর্যন্ত। নারীদের সারিতেও প্রায় ৪০ জন দাঁড়ানো। টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেলেও ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের বাসগুলো যেখানে দাঁড়ায়, সেই জায়গা ফাঁকা দেখা গেছে।

সারিতে দাঁড়ানো একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের কেউ কেউ দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা ধরে টিকিটের জন্য সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন। কয়েকটি বাসের টিকিট বিক্রির পর, কিছু সময়ের জন্য বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছু বাস ছেড়ে গেলে আবার টিকিট বিক্রি করা হয়।

টিকিট পেয়ে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন সায়েম খান। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি ময়মনসিংহে যাবেন। সায়েম খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর টিকিট পেয়েছি। এখন বাসের জন্য না জানি কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। তাঁর বাসের নম্বর ৬৩ বলে জানান তিনি।

এনা ময়মনসিংহ রুটের ইনচার্জ সুমন মাহমুদ বেলা আড়াইটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ভোর পাঁচটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে ৫৮টি বাস ছেড়ে গেছে। আরও ২০টি গাড়ির টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। তবে আপাতত টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

বাস দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রীর চাপ রয়েছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো ময়মনসিংহে যাত্রী নামিয়ে আবার ঢাকার পথে রয়েছে। তাই দেরি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৯০টি বাস চললেও গতকাল মোট ১৪০টি বাস ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে গেছে বলেও জানান তিনি।

এনা বাসের টিকিটের জন্য যাত্রীদের এমন দীর্ঘ সারি দেখা গেলেও ওই টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ হয়ে নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, বিরিশিরি, হালুয়াঘাট, মুক্তাগাছাগামী বিভিন্ন পরিবহনের কর্মীরা যাত্রীর জন্য ডাকাডাকি করছিলেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে কেউ কেউ ওই বাসেই উঠে পড়ছিলেন। তবে ওই সব পরিবহনে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি ভাড়া চাইতে দেখা যায়।

শ্যামলী বাংলা নামের একটি পরিবহন যায় মহাখালী থেকে হালুয়াঘাট পর্যন্ত। আজ দুপুরে ওই পরিবহনের একটি বাসকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত যাত্রীদের ডাকাডাকি করতে দেখা গেছে। ভাড়া চাওয়া হচ্ছিল ৫০০ টাকা।

বাসটির চালকের সহকারী লিমন মিয়া বলেন, তাঁদের বাস ময়মনসিংহ পর্যন্ত যাবে। যাত্রী পাওয়া সাপেক্ষে হালুয়াঘাট যেতে পারে, না–ও যেতে পারে।