শিক্ষকদের পাশে চান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনছবি: আশিকুজ্জামান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনের কথা ভাবছেন। এতে তাঁরা শিক্ষকদেরও সশরীর পাশে চান। শিক্ষকেরা বিবৃতি দিয়ে আহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসা ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

আজ শুক্রবার নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সমন্বয়ক প্রথম আলোকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় বিচার, চিকিৎসা ও ক্যাম্পাসে নিরাপদ পরিবেশের দাবিতে তাঁরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। এ ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিই অনুসরণ করতে চান তাঁরা। দাবি আদায়ে নিজেদের ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালনে তাঁরা শিক্ষকদেরও সশরীর পাশে চান।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ওই সমন্বয়ক প্রথম আলোকে বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনাবাসিক হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছেন। যাঁরা ঢাকায় আছেন, তাঁদের অনেকেই কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। আপাতত ঢাকায় আলাদা কর্মসূচি না দিয়ে কেন্দ্রের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়াই আমাদের সিদ্ধান্ত। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কেরা নিজেদের ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন।’

ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালনে জগন্নাথের আন্দোলনকারীরা শিক্ষকদের পাশে চান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষকদের পাশে পাওয়ার। এ জন্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলছি। তবে এখনো কোনো শিক্ষক আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজি হননি।’

দাবির বিষয়ে এই সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত ও দ্রুত বিচার চাই। হতাহত মানুষের সঠিক চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ চাই। কেন্দ্রের ঘোষিত সব দাবির বাস্তবায়ন চাই।’

তা ছাড়া আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হতাহত শিক্ষার্থীর তালিকা সংগ্রহ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক শিক্ষার্থীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার কাজ চলছে বলেও জানান এই সমন্বয়ক।

চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকেরা

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসা ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে সমিতি।

আজ শুক্রবার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি অনলাইন সভায় তাঁরা এসব দাবি জানান। পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সভার আলোচনার বিষয় ও দাবি জানানো হয়। এতে শিক্ষক সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমিন উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মাশরিক হাসান স্বাক্ষর করেন।

বিবৃতিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যা উদ্বেগজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, মর্মাহত ও শোকাহত। শিক্ষার্থীদের প্রাণহানিতে আমরা মানসিকভাবে বিচলিত ও বিপর্যস্ত।’

চলমান আন্দোলনে নিহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব তামিমের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু নিয়ে শোক প্রকাশ করেন শিক্ষকেরা। নিহতের পরিবারের যোগ্য সদস্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান তাঁরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে শিক্ষকেরা সশরীর অংশ নেবেন কি না, এমন এক প্রশ্নে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাশরিক হাসান বলেন, ‘সভায় বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। আমাদের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’