তাকসিম ছুটিতে, তাই ওয়াসার বোর্ড সভা আয়োজনে বাধা
ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের নিয়মিত সভা করতে বাধা দিচ্ছে ওয়াসা প্রশাসন। ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান তাঁর অনুপস্থিতিতে বোর্ড সভা আয়োজন করতে দিতে চাচ্ছেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে ১৬ অক্টোবর বিশেষ জরুরি সভা আহ্বান করেছে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড।
ঢাকা ওয়াসা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বোর্ডের নিয়মিত সভা ছিল ১১ অক্টোবর। কিন্তু সভার প্রস্তুতি নিতে অসহযোগিতা করছিল ওয়াসা প্রশাসন। এমডির দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) এ কে সহিদ উদ্দিনকে একাধিকবার বলার পরও কাজ হচ্ছিল না। পরে সভার তারিখ আজ বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) করা হয়েছিল। কিন্তু আজও সভা হচ্ছে না।
ওয়াসা বোর্ডের দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসার এমডি তাকসিম তাঁকে ছাড়া সভা আয়োজন না করতে বলছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব ও প্রকৌশলীদের দিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানকে সভা না করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। ওয়াসা প্রশাসন সভা করতে অসহযোগিতা করছে। বিষয়টি নিয়ে বোর্ড সদস্যরা ক্ষুব্ধ।
ঢাকা ওয়াসা আইনের তৃতীয় অধ্যায়ে কার্যপরিচালনা অংশে বোর্ড সভার বিষয়ে বলা আছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি দুই মাসে একবার বোর্ড সভা হবে।
আইনের ১১(৯) ধারায় বলা হয়েছে, ওয়াসার এমডি বোর্ডের যেকোনো সভায় যোগ দিতে পারবেন। তবে এমডির কোনো ভোটাধিকার থাকবে না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে এমডির দায়িত্বে থাকা সহিদ উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। সহিদ উদ্দিন বলেন, তাঁর এক নিকটাত্মীয় মারা যাওয়ায় তিনি ঢাকার বাইরে আছেন।
সংস্থাটির উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এ এম মোস্তফা তারেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জানামতে, ওয়াসা প্রশাসন সভা করতে কোনো অসহযোগিতা করছে না।’
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার রাতে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের বিশেষ জরুরি সভা আয়োজনের নোটিশ দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। আগামী রোববার (১৬ অক্টোবর) বেলা দুইটায় ঢাকা ওয়াসার বোর্ড রুমে এই সভা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
সভার একমাত্র আলোচ্যসূচিতে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা ওয়াসা প্রশাসন স্বাভাবিক বোর্ড সভা করতে অসহযোগিতা করার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।’
এ বিষয়ে কথা বলতে ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ও নিজের চিকিৎসা করাতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ছয় সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন তাকসিম। গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ শাখা থেকে তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের অনুমতিপত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়, তাকসিমের ছুটিতে থাকার সময় সংস্থার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সহিদ উদ্দিনকে এমডির অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় ছুটি দিলেও তাকসিম যুক্তরাষ্ট্রে বসে নথিপত্রে স্বাক্ষর করছেন, যা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটছে। এই বিষয় নিয়েও নিয়মিত সভায় আলোচনা হওয়ার কথা ছিল বলে বোর্ড সদস্যরা জানিয়েছেন।
ওয়াসার বোর্ড সদস্য ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব দীপ আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা ওয়াসা আইনের কোথাও বলা নেই, নিয়মিত সভায় এমডিকে উপস্থিত থাকতে হবে। তারপরও ওয়াসা প্রশাসনের আচরণ অভাবনীয়। আগামী রোববার জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে। যাঁরা সভা আয়োজনে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডির দায়িত্ব পান তাকসিম। তাঁর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তিনি প্রায় প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট সময় সেখানে থাকেন। দেশের বাইরে যাওয়ার আগে একটি অফিস আদেশ জারি করে তাকসিম অনলাইনে অফিস করার বিষয়টি এত দিন জানিয়ে যেতেন। তবে এবার ওয়াসা বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, তাকসিম পূর্ণ ছুটিতে থাকবেন। তিনি ভার্চ্যুয়ালি কোনো দায়িত্বপালন করতে পারবেন না।
ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা ওয়াসাকে নিজের কুক্ষিগত রাখতে চান তাকসিম। তাঁর অনুপস্থিতিতে বোর্ডের সভায় কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হোক, তা তিনি চান না। নিজে উপস্থিত থাকতে পারবেন না বুঝতে পেরেই তিনি সভা আয়োজনে বাধা দিচ্ছেন।