পান্থকুঞ্জে সমাবেশে উমামা ফাতেমা
গণ–অভ্যুত্থানের শক্তি হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া ব্যক্তিরাই এখন সবচেয়ে বেশি জনবিরোধী
যাঁরা গণ–অভ্যুত্থানের শক্তি হয়ে সচিবালয়ে ক্ষমতায় অধীন হয়েছেন, সেই মানুষগুলোই সব থেকে বেশি জনবিরোধী আচরণ করছেন। একটা অভ্যুত্থান এক শ্রেণির মানুষকে আকাশের চূড়ায় নিয়ে যায়, আরেক শ্রেণির মানুষকে কোথাও জায়গা দেয় না।’ কথাগুলো বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পান্থকুঞ্জ পার্কে গিয়ে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে উমামা ফাতেমা এ কথা বলেন। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশ নির্মাণের প্রকল্প বাতিলের দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে পান্থকুঞ্জ পার্কে অবস্থান করছেন বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেন তাঁরা।
সমাবেশে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী উমামা ফাতেমা অভিযোগ করেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করার মতো বিষয়কে অন্তর্বর্তী সরকার প্রাধান্য দিচ্ছে না। তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিধ্বংসী উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে কথা বললে তা শোনা হতো না। এটা খুবই দুঃখজনক যে একটা গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হচ্ছে।
উমামা ফাতেমা বলেন, এই শহরে ন্যূনতম বাসযোগ্যতা নেই। গত ১৫ বছরে ঢাকাকে ডাস্টবিনে (ময়লা ফেলার জায়গা) রূপান্তর করা হয়েছে। এখন সময় এসেছে শহরকে নিয়ে পরিকল্পনা করার। নগরবাসী ২০ বছর পর কেমন ঢাকা দেখতে চায়, সেটার জন্য সবাইকে সরকার ডাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ঢাকা শহরে মানুষের বাসযোগ্যতা সংকুচিত হয়ে আসায় বিতৃষ্ণা তৈরি হওয়া এই অভ্যুত্থানের পেছনে বড় কারণ ছিল বলে মন্তব্য করেন উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, ‘সরকার এ বিষয়গুলোকে আমলে নেয়নি। তারা শুধু গায়েবি কথাবার্তা, মুজিববাদিতা, মানে খুবই গায়েবি কথাবার্তা দিয়ে অভ্যুত্থানকে জাস্টিফাই করতে চায়।’
পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার আলোচনা করবে—সেই আশা করে উমামা বলেন, ‘তা না করে যদি দিনের পর দিন মুখে কুলুপ এঁটে পেছন থেকে স্যাবোটাজ (অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড) করে তাহলে এই একই আচরণ শেখ হাসিনা করেছেন, তাঁকে ভুগতে হয়েছে। কোনো স্যাবোটাজের বাংলাদেশ চাই না।’
বিগত সরকারের অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পগুলো রিভিউ (পর্যালোচনা) করার দরকার ছিল বলে মন্তব্য করে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়েও সেসব প্রকল্পের বেশির ভাগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। নানা ধরনের আপস হয়ে গেছে। তাহলে কীভাবে বুঝব যে এটা গণ–অভ্যুত্থানের সরকার?’
সরকার দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তাঁরা পান্থকুঞ্জ থেকে সরবেন না বলে ঘোষণা দেন গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব। সমাবেশে তিনি বলেন, বিগত সরকার জোর করে এই প্রকল্প শুরু করে। এলাকাবাসীর কোনো মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে ৪৫ প্রজাতির গাছ কেটেছে। আগের সরকার কোনো জলাশয়, মাঠ ও জনপরিসরের জায়গা ছেড়ে দেয়নি। যেখানেই খোলা জায়গা দেখেছে, নষ্ট করেছে।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের কর্মী সৈয়দা রত্না। তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে এভাবে পরিবেশ ধ্বংস করা হলে একদিন শিশুরা গাছ চেনা ভুলে যাবে। জলাশয়, পুকুর, পাখি ভুলে যাবে। ঢাকার একটি মাঠও নিষ্কণ্টক নয়। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সবকিছু রক্ষা করতে হবে।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন শিল্পী অমল আকাশ, ব্রাত্য আমিন, ফেরদৌস আরা রুমি, দীপক সুমন, উম্মে ফারহানা, বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান। সেখানে নাটক পরিবেশন করে বটতলা নামের একটি সংগঠন। প্রতিবাদী গান পরিবেশন করে বেতাল, হাফ হার্টেড সুডোস ও মায়ানগর।