থমথমে রাজধানী, যান চলাচল কম, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা
রাজধানীতে আজ মঙ্গলবার থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে মন্থর। গতকাল সোমবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পরে রাজধানীতে অগুনতি মানুষ রাজপথে নেমে আসেন। আন্দোলনে বিজয় অর্জনের আনন্দেই তাঁরা উদ্বেলিত ছিলেন। পাশাপাশি গণভবন, আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয় ও মহানগরীর বিভিন্ন কার্যালয়, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
আজও সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গণভবন ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় অসংখ্য মানুষকে সমবেত হতে দেখা যায়। কর্মবিরতি পালন করায় পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। সড়কে যানবাহনের সংখ্যা ছিল কম। হাতে গোনা কিছু বাস চলাচল করেছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের সংখ্যাও ছিল কম। দিনের প্রথম ভাগে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি প্রায় দেখাই যায়নি। তবে দুপুরের পর থেকে কিছু কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। রিকশাই ছিল আজ শহরের প্রধান যানবাহন।
দিনের প্রথম ভাগে যানবাহনের সংখ্যা কম থাকায় সড়কগুলোয় তেমন যানজট ছিল না। তবে দুপুর থেকে যানবাহনের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ক্রসিংয়ে শিক্ষার্থীদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে।
আগারগাঁও চার রাস্তার মোড়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিলেন বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী সালিম সাদমান ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু। সালিম সাদমান জানান, কেউ কোনো নির্দেশ দেননি। শিক্ষার্থীরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই গতকাল থেকে লুটপাট প্রতিরোধ, লুটের জিনিস সংগ্রহ করে কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মতো বিভিন্ন কাজ করছেন। তাঁরা সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকতে বোঝাচ্ছেন।
আজ দুপুরে আগারগাঁওয়ের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সামনে ও সাইনবোর্ডের পাশে অঙ্কিত বা ব্যানারে ঝুলিয়ে রাখা বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলা বা মুছে ফেলতে দেখা গেছে। বেলা দুইটার দিকে দেখা গেল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কার্যালয়ের সাইনবোর্ডের পাশে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের স্লোগান–সংবলিত প্রতিকৃতিটি লাল কালিতে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পাশে বড় একটি বিলবোর্ডে আঁকা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি মুছে ফেলার কাজ করছেন কয়েকজন।
ধানমন্ডি ৫ নম্বর সড়কের ৫৪ বাড়ি ‘সুধা সদনে’ গতকাল আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এতে ভবনের নিচতলা ও দোতলার অংশবিশেষ পুড়ে গেছে। আজ দুপুরেও দেখা গেছে ওপরের তলাগুলোর কক্ষ থেকে আসবাবসহ বিভিন্ন জিনিস লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন লোকজন।
একই অবস্থা দেখা গেল ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে। মূল তিনতলা বাড়িটি পুড়ে গেছে। বহু মানুষ আসছিলেন ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে। শিক্ষার্থীরা লুটপাট ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চূড়ান্ত পর্বের শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম জানান, কেউ যেন কোনো জিনিস নিয়ে যেতে না পারেন, সেটি তদারক করছেন।
এদিকে রাজধানী থেকে আজ দূরপাল্লার বাসও তেমন চলাচল করেনি। দুপুরে গাবতলী টার্মিনালে দেখা যায়, বেশির ভাগ বাসই সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। কল্যাণপুরে বাসগুলোর কাউন্টারে কথা বলে জানা যায়, যাত্রী নেই বলে অধিকাংশ বাসই গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি।
কল্যাণপুরে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মো. হাসিব জানান, আজ শুধু নওগাঁ ও রংপুরে তাঁদের দুটি বাস যাওয়ার কথা। বেলা দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে গাড়িগুলো ছাড়তে পারে। শ্যামলী পরিবহনের ফোরম্যান উৎপল বিশ্বাস জানান, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে আজ তাঁরা চারটি গাড়ি ছাড়ার ব্যবস্থা করেছেন। তবে এর নির্দিষ্ট সময় নেই। যাত্রীর ওপর নির্ভর করে গাড়ি ছাড়বেন।
একই অবস্থা দেখা যায় মহাখালী বাস টার্মিনালে। এখান থেকে আজ দূরপাল্লার বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে না। কিছু লোকাল বাস ভেঙে ভেঙে ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার মতো গন্তব্যে চলছে বলে জানান নেত্রকোনা পরিবহন নামের গাড়ির কন্ডাক্টর মো. জসিম।
এদিকে আজ অফিস খোলা থাকলেও কাজকর্ম তেমন হয়নি। অফিসগুলোয় লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। বেলা আড়াইটায় মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্ধারিত সময়েই অফিসে এসেছেন। তবে লোকজন তেমন না থাকায় লেনদেন বিশেষ হয়নি।