পান্থকুঞ্জ নিয়ে সরকারের নড়াচড়া নেই

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশের নির্মাণকাজ বাতিলের দাবিতে ৫০ দিন ধরে পান্থকুঞ্জ পার্কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন গাছ রক্ষা আন্দোলনছবি: সাজিদ হোসেন

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় ৫০ দিন ধরে আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চললেও সরকারের কোনো নড়াচড়া নেই। আন্দোলনের শুরুর দিকে তিন উপদেষ্টা এসেছিলেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথাও জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এখনো সে বৈঠক হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না, থাকলে প্রকল্প পর্যালোচনার উদ্যোগ নিত।

আজ শুক্রবার দুপুরে পান্থকুঞ্জ পার্কে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন আয়োজিত ‘পান্থকুঞ্জে ৫০ দিন: নাগরিক ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ’–এ বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশের নির্মাণকাজ বাতিলের দাবিতে ৫০ দিন ধরে পান্থকুঞ্জ পার্কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে সংগঠনটি।

সমাবেশের শুরুতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, এই আন্দোলন শুরুর কিছুদিনের মধ্যে সরকারের তিন উপদেষ্টা এসে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ৪০ দিন পার হলেও সেই অর্থে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। সরকারের দিক থেকে কোনো নড়াচড়া নেই। পান্থকুঞ্জ অংশে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও হাতিরঝিল অংশের কাজ চলমান। এটা প্রমাণ করে যে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরের সরকার, যারা নিজেদের জনমানুষের সরকার বলে, বিগত সরকারের স্বার্থের প্রকল্প বাতিলের কথা ছিল তাদের; কিন্তু সে উদ্যোগের লক্ষণ নেই।

এই নগরবিদ আরও বলেন, এই প্রকল্প থেকে বিদেশি কোম্পানির মুনাফা হচ্ছে। আর সুফল পাবে স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারী। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ চুক্তি পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসী, পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিলকে মুক্তি দিন। এই প্রকল্পের সময় পরিবেশগত সমীক্ষার নামে যা হয়েছে, সেখানে কোনো নগর পরিকল্পনাবিদ ও এলাকাবাসীর যুক্ততা ছিল না।’

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, পান্থকুঞ্জ এলাকায় জলাধার ছিল। মানুষ এখানে সময় কাটাতে আসত। এই শহর থেকে শুধু গাছ না, জলাধারও হারিয়ে যাচ্ছে। দেশের স্থপতিদের এ বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে।

এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত পেশাজীবীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শায়ের গফুর। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে যুক্ত পেশাজীবী, আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীর ভূমিকা স্পষ্ট করতে হবে। পরামর্শক বিদেশি হলেও দেশের যাঁরা যুক্ত থাকেন, যাঁদের হাত দিয়ে এটা চূড়ান্ত হয় তাঁদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান না থাকলে প্রকল্প প্রণীত হতে পারে না।

উল্লেখ্য, গত ২৩ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান পান্থকুঞ্জ পরিদর্শনে যান। সেদিন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের র‍্যাম্প (সংযোগ সড়ক) পান্থকুঞ্জ পার্ক দিয়ে নামবে কি না, সে বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান পরিবেশ উপদেষ্টা।

গণ–অভ্যুত্থানের পরের সরকার, যারা নিজেদের জনমানুষের সরকার বলে, বিগত সরকারের স্বার্থের প্রকল্প বাতিলের কথা ছিল তাদের; কিন্তু সে উদ্যোগের লক্ষণ নেই।
অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স

এ বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, আন্দোলন শুরুর ১০ দিনের মাথায় উপদেষ্টারা এখানে এসে বলেছিলেন, আলোচনা করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা হয়নি। এই উপদেষ্টারা গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণ–আকাঙ্ক্ষার চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু তাঁদের আচরণে অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। উপদেষ্টারা জনগণের কথা শুনছেন না। উপদেষ্টারা কাদের স্বার্থ উদ্ধার করছেন সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদ ও আন্দোলন। পান্থকুঞ্জ ধ্বংস হলে শুধু এই এলাকার মানুষ নয়, পুরো রাজধানীর বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা বলেন, বর্তমান সরকার মুখে যাই বলুক, তাদের কাছে আগের সরকারের উন্নয়ন মডেল সমস্যা মনে হয় না। তা না হলে এ ধরনের প্রকল্প পর্যালোচনার উদ্যোগ নিত তারা।

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ তরুণ আলোকচিত্রী তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামানও সমাবেশে বক্তব্য দেন। নাগরিক সমাবেশে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হয়।