জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসারে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার নারী মারা যান। অথচ এই দুই ক্যানসারই প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে প্রতিরোধ করা সম্ভব। নারীদের এই ক্যানসারের স্ক্রিনিং সরকার বিনা মূল্যে দেয়। শুধু সচেতনতার অভাবে প্রতিবছর নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশকে এই অসংক্রামক রোগে মৃত্যু কমিয়ে আনতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার হলে আয়োজিত জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকাবিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনা মূল্যে জরায়ুমুখ ক্যানসারের স্ক্রিনিং করানোর সুযোগ নারীরা পেলেও শহরে সেই ব্যবস্থা নেই। ফলে শহরের নারীদের সচেতন করতে বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করতে রাজধানীর ৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, যে দুই অসুস্থতা, জরায়ুমুখ ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, এই দুটি ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। একটি সমাজ কতটা সভ্য, তা অনুমান করা যায় সেই সমাজের নারীরা কেমন আছেন, সেই ব্যবস্থার ওপর। তিনি বলেন, জরায়ুমুখ ক্যানসারের জীবাণু ১০ থেকে ১৫ বছর আগে জরায়ুতে বাসা বাঁধে, যা স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে সহজে শনাক্ত করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। আর স্তন ক্যানসার একটি নির্দিষ্ট সময়ে শনাক্ত হলে সেটিও প্রতিরোধ সম্ভব।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডেঙ্গু নিয়ে বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গু নিয়ে খারাপ অবস্থায় আছি। এই ডেঙ্গু প্রতিরোধযোগ্য। আমরা যদি নিজেদের বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি, তাহলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা কঠিন কিছু নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ জন্য শিক্ষার্থীদের বলেছি, প্রতি তিন দিনে এক দিন তাদের বাসাবাড়ির চারপাশ পরিষ্কার করবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক আশরাফুন্নেসা বলেন, ‘জরায়ুমুখের ক্যানসারের জীবাণু একটি ধীরগতির ভাইরাস, যা ক্যানসারে রূপ নেওয়ার ১০ থেকে ১৫ বছর আগে জরায়ুতে প্রবেশ করে। আমরা স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে সহজেই এই ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারি। আমরা ২২ মিলিয়ন মানুষকে টার্গেট করেছি, এর মধ্যে ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ নারীর স্ক্রিনিং করাতে পেরেছি। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। নারীরা স্ক্রিনিংয়ে আসতে চান না। এ জন্য এবার মায়েদের সচেতন করতে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগে স্কুলের ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু ছিল, সেটা আবার চালু করতে হবে। এ ছাড়া স্কুলের প্রাতঃসমাবেশে এক দিন করে এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ আলোচনা করলে উপকৃত হব। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও এলজিইডিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’ বিজ্ঞপ্তি