বঙ্গবাজারে আগুনে আংশিক পোড়া কাপড় কিনবে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন
রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান। এসব দোকানের প্রায় সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে এর মধ্যেও কিছু কাপড় পানিতে ভিজেছে, দাগ লেগেছে, নয়তো খানিকটা পুড়েছে। চাইলে এসব কাপড় ঘরের বাইরে না হলেও ভেতরে পরতে পারবেন অনেকে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা তাই এমন কাপড় উদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ কাজে তাঁদের সহায়তা করছেন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ১৩ জন স্বেচ্ছাসেবক।
তবে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা যে শুধু এসব কাপড় উদ্ধারেই সহায়তা করছেন তা নয়, সংগঠনটি এসব কাপড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনেও নেবে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে এসব কাপড় কিনবে বলে জানিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বঙ্গবাজারে আগুনে পোড়া কাপড়গুলো কেনা নিয়ে পোস্ট দিয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যানন্দ বিক্রির অনুপযোগী কিন্তু পরার উপযোগী কাপড়গুলো কিনে নিতে চায় বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য। পরিবেশগত কারণে এগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় তারা।
ফেসবুক পেজেই জানানো হয়েছে, বিদ্যানন্দের এই মানবিক উদ্যোগে অংশ নিতে দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে এসব কাপড় কিনতে চান বলে বিদ্যানন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। প্রবাসীরাও ঈদের অন্যান্য পোশাকের পাশাপাশি রাখতে চান ঝলসে যাওয়া একটা কাপড়। লাখ টাকার পোড়া কাপড় কিনতে চেয়েছেন একজন। অনেকে জানিয়েছেন, তাঁরা হয়তো পোশাকটি পরবেন না, তবে আলমারিতে পোশাকটি অনেক যত্ন করে রেখে দেবেন স্মৃতি হিসেবে।
আজ মঙ্গলবার রাত পৌনে নয়টার দিকে মুঠোফোনে কথা হলো বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ প্রধান সালমান খান ইয়াছিনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাসেবকেরা উদ্ধার কার্যক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা করছিলাম। এ সময় মাথায় এই চিন্তা (আংশিক পুড়ে যাওয়া কাপড় কিনে নেওয়ার) আসে। বিদ্যানন্দ চাইলে তো এ কাপড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনে এই ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে পারে। মানবিক জায়গা থেকেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
সালমান খান ইয়াছিন আরও বলেন, ‘বঙ্গবাজারের মার্কেটে বিদ্যুৎ নেই। চার্জার লাইট দিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় এখনো আগুন জ্বলছে। প্রচণ্ড ধোঁয়া। আগুন নেভানোর যে পানি তা–ও প্রচণ্ড গরম হয়ে আছে। ব্যবসায়ীরাও এখন কাপড় বিক্রি করার মতো অবস্থায় নেই। তাঁরা যে যতটুকু পারছেন, তাই উদ্ধার করছেন। বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকেরা ট্রাকে কাপড় তুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছেন। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীর মুঠোফোন নম্বরটি সংগ্রহ করছেন।’
ব্যবসায়ীদের যাতে অন্তত ক্ষতি না হয়, এমন দামে কাপড়গুলো বিদ্যানন্দ কিনতে চায় জানিয়ে সালমান খান ইয়াছিন বলেন, পরে এসব কাপড় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ঈদপোশাক বা ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করবে। এই কাপড়গুলো যে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে কেনা হয়েছিল, তা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
বঙ্গবাজারে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার নামে অনেকে কাপড় চুরি করেছেন বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে সালমান খান বলেন, এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও কেউ যদি চুরি করতে পারেন, তাহলে তো বলার আর কিছুই নেই। কারও মধ্যে মানবিকতা বলে কিছু থাকলে চুরি করা সম্ভব নয়।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, ‘আগুনের দাগ লেগে যাওয়া একটা কাপড় কি আপনার ঈদের বাজেট থেকে কিনতে চাইবেন? একটু দাগ না হয় থাকছে কাপড়ে, কিন্তু একটা সংসারের কষ্টের দাগ তো মুছবে।’