বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী হত্যা
হত্যাকারীদের ধরতে রামপুরার সমাবেশ থেকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানী ঢাকার রামপুরা ব্রিজে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। সেখান থেকে তাঁরা হত্যাকারীদের ধরতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন। না হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
আজ বুধবার বিকেল চারটার পর শিক্ষার্থীরা সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ব্রিজে অবস্থান নেন। সেখানে তাঁরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এতে ব্রিজের পূর্ব পাশের দুই লেন বন্ধ হয়ে যায়। এক লেন দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। তাতে ওই এলাকায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনা না হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সম্পৃক্তরা গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন। তাঁদের খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিও জানানো হয়েছে সমাবেশ থেকে। এই কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে।
সমাবেশ শেষে সোয়া ছয়টার দিকে শিক্ষার্থীরা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে মশাল মিছিল শুরু করেন। এই মিছিল রামপুরা ব্রিজ হয়ে মেরুল বাড্ডার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত যায়। পরে মিছিলটি সেখান থেকে ঘুরে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে এসে শেষ হয়।
১২ ডিসেম্বর ভোরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজবির হোসেন শিহানকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সীমান্ত। এর দুই দিন পর ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, দুই শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের পাশাপাশি তাঁরা সারা দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছেন।
সমাবেশে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নাজিফা জান্নাত বলেন, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নেই। বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়ার হুমকি আসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং দুই শিক্ষার্থী হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদ বিন রনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা হচ্ছে ছাত্র-জনতা। এখন ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে এই সরকারের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তাঁরা নিজেরাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই ছাত্র হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়াদের গুপ্ত হত্যা করা হচ্ছে, বিভিন্ন মাধ্যমে অনেককে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী যাবের বিন নূর। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এভাবে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রেখে সরকার এখনো নির্বিকার। তাই অবিলম্বে শিক্ষার্থী হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী প্রিতম কুমার সমাবেশে বলেন, এই দেশকে নিরাপদ করতে, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জীবন বাজি রেখে তাঁরা আন্দোলন করেছেন। অথচ এখনো শিক্ষার্থীরা নিরাপদ না। ছাত্ররা আর কতবার জীবন দেবে, কতবার আহত হবে—এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি। এখন ছাত্রদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে যেসব গুপ্ত হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহত ইমপেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী জিল্লুর শেখ বাবা হাসান শেখ সমাবেশ যোগ দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর ছেলে জিল্লুর যে কারণে শহীদ হয়েছেন, সেই আকাঙ্ক্ষা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। দেশে আগেও দুর্নীতি ছিল, এখনো আছে। আগেও ছাত্ররা অনিরাপদ ছিল, এখনো একই অবস্থা আছে। ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যা বন্ধ করার পাশাপাশি সব হত্যার বিচার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হত্যার পেছনে কারা, সেটি খুঁজে বের করতে হবে।