রাজধানীতে হচ্ছে বিড়ালের র‍্যাম্প শো, যেমন খুশি তেমন সাজ আর খাদক বিড়ালের প্রতিযোগিতা

বিড়াল নিয়ে র‍্যাম্প শো, যেমন খুশি তেমন সাজ আর খাদক বিড়াল প্রতিযোগিতার জন্য এটা তৈরি করা হয়েছে
ছবি: আয়োজকদের ফেসবুক থেকে নেওয়া

এ পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। তবে মিলনমেলায় তাঁরা একা আসবেন না; তাঁদের পোষা বিড়ালও আসবে। আর এসব বিড়াল র‍্যাম্প শো, যেমন খুশি তেমন সাজ আর খাদক বিড়াল প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। বিজয়ী বিড়ালের মালিককে আকর্ষণীয় পুরস্কারও দেওয়া হবে।

কয়েকজন পশুপ্রেমী রাজধানীতে প্রথমবারের মতো বিড়ালের এ ধরনের আয়োজন করছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান এই আয়োজনের প্রধান সমন্বয়ক মো. আলমগীর।

মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কয়েকজন বন্ধু বিড়ালসহ অন্য পশুপাখি বা প্রাণী ভালোবাসেন। সবার বাসাতেই বিড়াল আছে। এসব বন্ধু নিজেদের মতো করে একসঙ্গে হয়ে কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন। সে জন্য রাজধানীর একটি স্থানও ঠিক করে ফেলা হয়েছিল। আর কেউ এতে অংশ নিতে আগ্রহী কি না, ফেসবুকে এমন একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। তারপর এত সাড়া পেয়ে এখন আয়োজকেরাই বেকায়দায় পড়েছেন। পরে আগের স্থান বাতিল করে বড় জায়গায় এ আয়োজন করতে হচ্ছে। আয়োজনে বিনা মূল্যে নিবন্ধন করছেন বিড়ালের মালিকেরা। এখানে বিনা মূল্যে বিড়ালের চিকিৎসার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

কাল শুক্রবার রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে বেলা ১১টা থেকে দিনব্যাপী বিড়ালের এ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বুধবার মো. আলমগীর যখন প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনো বিড়ালপ্রেমীদের ফোন আসছিল, অনলাইনে নিবন্ধনের নিয়মকানুনসহ অন্যান্য নিয়ম জেনে নিচ্ছিলেন। মো. আলমগীর জানান, আয়োজক বন্ধুদের দেওয়া চাঁদা থেকেই সব আয়োজন করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যে পশুপ্রেমীসহ অন্যরা সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছেন বলেই ব্যাপক আকারে আয়োজনটা করা সম্ভব হচ্ছে।

মো. আলমগীর একজন রসায়নবিদ। তাঁর মতে, এ আয়োজনে মূলত পশুপ্রেমীদের একসঙ্গে জড়ো করা হচ্ছে। প্রাণী লালনপালন, উদ্ধার, নিষ্ঠুরতা বন্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা চালানো হবে। দিদার পাটোয়ারী, আমিনুল ইসলাম, রিয়াজ উদ্দিন, জান্নাতুল খাতুন, কাকলী ইসলামসহ যাঁরা এ আয়োজনে সার্বিকভাবে সহায়তা করছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মো. আলমগীর।

বিড়ালের প্রতিযোগিতার জন্য যে তিন হাজার ব্যক্তি নিবন্ধন করেছেন, তাঁদের ৯৫ শতাংশই ঢাকার বাসিন্দা। একজন বিড়ালমালিক একটি বিড়াল দিয়ে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াতে পারবেন। আয়োজকেরা জানান, নিবন্ধনকারী মালিকদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। ৩০ শতাংশ দেশি বিড়ালের পাশাপাশি পার্শিয়ানসহ অন্যান্য বিড়ালও আছে।

বিড়ালগুলো তো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়, র‍্যাম্প শো বা অন্যান্য প্রতিযোগিতায় কীভাবে অংশ নেবে, তা জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, পোষা বিড়াল ঘরের বাইরে গিয়ে সহজেই স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে না। কোনো বিড়াল মঞ্চে হাঁটলে বা দৌড় দিলেও বিড়ালপ্রেমীরা আনন্দ পাবেন। এর মধ্য থেকেই বিজয়ী বিড়ালকে খুঁজে বের করা হবে। লটারির মাধ্যমে খাদক বিড়াল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী নির্বাচিত করা হবে। পরে প্রতিযোগিতা হবে। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিড়ালের খাবারের আয়োজন করবেন অনুষ্ঠান আয়োজনকারীরা।

বিড়াল নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজকদের অন্যতম মো. আলমগীর
ছবি: সংগৃহীত

এতগুলো বিড়ালের মিলনমেলা, কোনো বিড়াল হারালে বা কোনো ক্ষতি হলে তার দায় কে নেবে—এ প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বললেন, বিড়ালের মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিজের মানিব্যাগ এবং নিজের বিড়াল সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে রাখবেন। বিড়াল হারালে বা অন্য কোনো ক্ষতি হলে তার দায় কেউ নেবে না।

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বিড়াল নিয়ে এমন অনুষ্ঠান করার জন্য অনেকে সমালোচনা করছেন জানিয়ে মো. আলমগীর বললেন, ঘরে একটু খাবার থাকলে যিনি বিড়াল পালেন বা ভালোবাসেন, তিনি সেখান থেকেই বিড়ালকে খাবার দেন। তুরস্কে ভূমিকম্পে উদ্ধার অভিযানে উদ্ধারকারীরা কিন্তু শুধু মানুষকে বাঁচাননি, বিড়ালসহ অন্যান্য প্রাণীকেও উদ্ধার করেছেন।

তবে একাধিক পশুপ্রেমী এই আয়োজন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেছেন, বিড়ালের মিলনমেলা বা প্রতিযোগিতার আয়োজনে বিড়ালের ক্ষতি করার চেয়ে ভালো কিছু হবে না বলেই মনে করছেন। পশুপ্রেমীরা বলছেন, আর প্রাণী বা পশুপাখি তো মজা করার বিষয় নয়। এসব আয়োজনের পেছনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যটাই বেশি থাকে।

এ বিষয়ে মো. আলমগীর জানান, এ আয়োজন করতে গিয়ে তাঁদের পকেটের টাকা খরচ হচ্ছে। এ থেকে তাঁরা লাভবান হচ্ছেন বা হবেন—বিষয়টা তেমন নয়। আয়োজনটা করা হচ্ছে শখ থেকে। তবে আয়োজন শেষে পশুপ্রেমীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে। এই স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রাণী রক্ষায় দেশব্যাপী কাজ করবেন।