বৃষ্টি থেমেছে ২৬ ঘণ্টারও বেশি সময় আগে। তবে পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড ও মাজেদ সরদার রোড থেকে এখনো পানি সরেনি। এতে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, ক্ষণিকের বৃষ্টিতেই সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চান তাঁরা।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, বৃষ্টি হয়েছে গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত। কিন্তু সেই বৃষ্টির পানি আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়ও সরেনি। এর আগে ঈদের দিনের বৃষ্টিতেও তাঁরা পানিবন্দী অবস্থায় ছিলেন। সামান্য বৃষ্টি হলে অনেক বিপাকে পড়েতে হচ্ছে তাঁদের।
আজ সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, কাজী আলাউদ্দিন রোড ও মাজেদ সরদার রোডে এখনো পানি রয়েছে। পানি নিষ্কাশনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। কাজী আলাউদ্দিন রোডে পানি জমলে ৭২ ঘণ্টার আগে তা সরানো যাচ্ছে না।
এই প্রকৌশলী বলেন, ২০২১ সালের জুনে কাজী আলাউদ্দিন রোডে নর্দমা সংস্কারে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তাঁকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি দুই বছরেও সংস্কারকাজ শেষ করতে পারেননি। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের তোপের মুখে পড়েছেন তাঁরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সন্ধ্যায় কিছু জায়গায় কোমরসমান পানি ছিল, এখনো হাঁটুসমান পানি। সড়কে পানি জমে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছেন না। ছোটখাটো কাজে বাসা থেকে বের হলেও রিকশায় করে চলাচল করতে হচ্ছে। এই সড়কের সংস্কারকাজ চলমান থাকায় কিছু কিছু স্থানে গর্তও রয়ে গেছে। এ জন্য তাঁরা বেশ ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছেন।
দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, কাজী আলাউদ্দিন রোডের সংস্কারকাজ করতে ওআই-এমকেটি-এমএএ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানের নামে কাজটি পেয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোরশেদ কামাল। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকৌশল বিভাগের দুই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কার্যাদেশ দেওয়ার পর থেকেই সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা কাজী মোরশেদ কামালকে তাগিদ দিলেও তিনি কাজ করছেন না। কাজ শেষ করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে বহুবার। কিন্তু তিনি নিজের খেয়ালখুশিমতো কাজ করেন। করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তাঁরা কঠিন ভাষায় তাঁকে কিছু বলতেও পারছেন না। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কাজ শেষ না করার বিষয়ে জানতে কাজী মোরশেদ কামালের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা পাঠালেও সেটির কোনো জবাব দেননি তিনি।
পরে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, কাজী আলাউদ্দিন রোডের সংস্কারকাজের দরপত্র যে সময় দেওয়া হয়েছিল, সে সময়ে তিনি প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে ছিলেন না। এর অনেক পরে করপোরেশনে এসেছেন। এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। পরে করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
কাজী আলাউদ্দিন রোডের বাসিন্দা মো. ইমরান হোসেন আজ রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, নাজিরাবাজার মোড় থেকে বংশাল মোড় পর্যন্ত সড়কে এখনো পানি জমে আছে। কাজী আলাউদ্দিন রোডে ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে। সিটি করপোরেশন এই সড়কের উন্নয়নকাজ শুরু করলেও সংস্কারকাজ দুই দিন চললে কয়েক দিন ধরে বন্ধ থাকে। সড়কে পানির এ কষ্টে তাঁদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এ থেকে তাঁরা মুক্তি চান।