দিল মনোয়ারার লেখা নারীবৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার হাতিয়ার
লেখক, সাংবাদিক, নারী অধিকারকর্মী দিল মনোয়ারা মনুর লেখায় নারী অধিকার ও বৈষম্যের কথা উঠে আসত। অথচ দেশে কবি–সাহিত্যিকদের মর্যাদা দেওয়া হয় না। এই দায় রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকেই তাঁদের মূল্যায়নের জন্য প্রকৃত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ওয়াইডব্লিউসিএ মিলনায়তনে দিল মনোয়ারা মনুর ‘কবিতা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় আলোচকেরা এসব কথা বলেছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক কাজী মদিনা। তিনি বলেন, দিল মনোয়ারা মনু সাংবাদিকতাকে ভালোবাসতেন বলে কলেজের শিক্ষকতা ছেড়ে অনন্যা পত্রিকায় যোগ দিয়েছিলেন। মানুষকে মূল্যায়ন করার গুণটি তিনি লালনপালন ও চর্চা করতেন।
পাক্ষিক অনন্যার সাবেক নির্বাহী সম্পাদক দিল মনোয়ারা মনু ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ৬৯ বছর বয়সে মারা যান।
দিল মনোয়ারা মনুর স্বামী বেসরকারি সংস্থা এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা স্বাগত বক্তব্যে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যে বইটি প্রকাশিত হয়েছে, সেই লেখাগুলো ৪৫-৪৬ বছর আগের। ১৯৮০-৮১ সালে লেখাগুলো বিভিন্ন পত্রিকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। লেখনীর মধ্যে তাঁর (দিল মনোয়ারা) আদর্শ ও লক্ষ্য চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে, লেখনীর মধ্য দিয়েই তিনি স্পষ্ট করেছেন কোন পথে যেতে হবে। এটাই ছিল তাঁর মুনশিয়ানা।
আলোচনায় দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘মনু আপাকে সামাজিক আন্দোলনে দেখা যেত। কচি–কাঁচার মেলাকে দাঁড় করানোর জন্য তাঁর অবদান অনেক। মানুষ চলে যাওয়ার পরেই তাঁর মূল্যায়ন হয়। তাঁকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ হয়েছে, তা তাঁকে আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, ‘দিল মনোয়ারা মনুকে যাতে আমরা ভুলে না যাই, সে জন্য এ–জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজন আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তিনি সব সময় কবিদের সম্পর্কে খোঁজ রাখতেন। প্রয়োজন পড়লেই সবার পাশে দাঁড়াতেন। দুঃখজনক যে আমাদের দেশে কবি–সাহিত্যিকদের মর্যাদা দেওয়া হয় না। এই দায় রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকেই তাঁদের মূল্যায়নের জন্য প্রকৃত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সভাপতি অধ্যাপক রওশন আরা ফিরোজ বলেন, দিল মনোয়ারা মনুর লেখাতে নারী অধিকার ও বৈষম্যের কথা উঠে আসত। তরুণ বয়সে লেখা হলেও লেখাগুলোয় আছে গভীর চিন্তা ও দর্শনের প্রতিফলন।
নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, দিল মনোয়ারা মনু শিশুদের জন্য অনেক কাজ করতেন। সারা জীবনই তিনি নারীর বঞ্চনার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাঁর কণ্ঠ সব সময়ই ছিল সোচ্চার। শুধু কাজ ও কথাতেই নয়, তাঁর লেখার মধ্য দিয়েই তা প্রকাশিত হতো। তাঁর লেখাগুলো নারী অধিকার, নারীবৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল, যা এখনো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।