সোনালী ব্যাংকে নিয়োগবঞ্চিতদের পুনর্নিয়োগের দাবি
সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ২০১৪-১৫ সালের সিনিয়র অফিসার, অফিসার ও অফিসার ক্যাশ পদে নিয়োগবঞ্চিতরা পুনর্নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাঁরা মানববন্ধন করেন।
নিয়োগবঞ্চিতদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুহাম্মদ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী অবশিষ্ট মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থীরা বর্তমানে ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার। আমরা ১৭০৭টি পদের বিপরীতে (প্রিলি, লিখিত ও মৌখিক) সব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং মৌখিক পরীক্ষা শেষে ১৪৩৬ প্রার্থী নিয়োগের জন্য মনোনীত হই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রার্থী না পাওয়ায় ২৭১টি পদ খালি রাখা হয়। পরবর্তীতে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন ও নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে ২০১৪-১৫ সালের মেধাতালিকার অবশিষ্ট ৪২০৯ প্রার্থী থেকে প্রথম ধাপে ১২৭১টি পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ৪৩৮তম বোর্ড সভায় ২০১৫ সালের ১ আগস্ট অনুমোদিত হয়। ব্যাংক ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট অবশিষ্ট মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ প্রদানের ছাড়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে একটি পত্র প্রেরণ করলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর অবশিষ্ট মেধাতালিকা থেকে ১২৭১ প্রার্থীকে অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগের অনুমতি প্রদান শীর্ষক একটি পত্র প্রেরণ করে।
২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিএসসি (ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি) গঠিত হলে ওই কমিটি ২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সভায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ছাড়পত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের অবশিষ্ট মেধাতালিকা থেকে পূর্বের নিয়োগ সম্পন্নকরণের সুপারিশ প্রদান করেছিল।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের চূড়ান্ত নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের সময় তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় তাঁদের কাউকেই নিয়োগ দেওয়া যাবে না। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছিল ২০১৫ সালের মে মাসে, যা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে মাত্র ৯ মাস আগে। অথচ আমরা ৩ বছর অতিক্রান্তের মিথ্যা অজুহাতে নিয়োগবঞ্চিত হয়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছি।’
নিয়োগবঞ্চিতরা বলেন, ‘এরপর আমরা ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করলেও রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করেন তৎকালীন আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ফলে সেখানেও আমরা ন্যায়বিচারবঞ্চিত হয়েছি। এরই মধ্যে ৩২ প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হলেও আমাদের নিয়োগের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। এ বৈষম্য আমাদের মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে চাকরির অভাবে বেকারত্বের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এবং পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।’
মানববন্ধনে নিয়োগবঞ্চিতরা বলেন, ‘আমরা বিনীতভাবে সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি ২০১৪-১৫ সালের অবশিষ্ট মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থীদের পুনর্নিয়োগের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে আমাদের ন্যায়সংগত অধিকার ফিরিয়ে দিন। আমরা আশা করি, ছাত্র-জনতাসহ বৈষম্যবিরোধী সম্মিলিত আন্দোলনের প্রতিফলনে গঠিত বর্তমান সরকার এ বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সব আবেদনকারীর জন্য একটি মানবিক ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।’