কর্মচাঞ্চল্যবিহীন মন্থর দিন কাটল গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে। সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির এই দিনে রাজধানীতে দিনের প্রথমার্ধে তেমন কর্মচাঞ্চল্য থাকে না। তবে দোকানপাট, বিপণিবিতানগুলো খোলা থাকে। বিকেল থেকে সড়কে যানবাহন চলাচলও অনেক বেড়ে যায়। তবে স্বাভাবিক সময়ের সেই পরিস্থিতি ফিরে আসেনি।
শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তার অভিঘাত থেকে পুরো বেরিয়ে আসতে পারেনি নাগরিক জীবনযাত্রা। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। তা সত্ত্বেও দোকানপাটে তেমন বেচাকেনা হয়নি। বিভিন্ন এলাকার মার্কেটগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, লোকসমাগম ছিল খুবই অল্প। এতে বেচাকেনা হয়েছে সামান্যই। আজ শনিবারও সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানী কারফিউমুক্ত থাকবে।
নিউ এলিফ্যান্ট রোডের বিখ্যাত জুতার মার্কেটগুলোর সারি সারি দোকান ছিল প্রায় ক্রেতাশূন্য। অধিকাংশ দোকানে কোনো বিক্রিই হয়নি। স্প্যারো শুর ব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহিম জানালেন, এই এলাকায় শুক্রবার সাধারণত বিক্রি অন্য দিনের তুলনায় বেশি থাকে। তাঁদের দোকানে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জোড়া জুতা-স্যান্ডেল বিক্রি হয়। সেখানে গতকাল বেলা তিনটা অবদি মাত্র দুই জোড়া বিক্রি হয়েছে। এখন দোকান খোলা রাখার সময়ও কমেছে। দোকান খুলতে হচ্ছে এক ঘণ্টা দেরিতে বেলা ১১টায়, আবার বন্ধ করতে হচ্ছে বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে। ৫টা থেকে কারফিউ শুরু হয়। প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে দোকানমালিকের।
একই অবস্থা এই এলাকার কার্পেটের দোকানগুলোতে। রূপসী কার্পেটের বিক্রয় প্রতিনিধি জাহিদ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার বিক্রির খাতাই খুলতে পারেননি। গতকাল কয়েকটি পাপোশ বিক্রি হয়েছে মাত্র। চা-নাশতার খরচই উঠবে না তাতে।
শাড়ির জন্য ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের রয়েছে বিশেষ পরিচিতি। বুধবার থেকে দিনের বেলায় কারফিউ শিথিল করায় মার্কেট খুললেও ক্রেতা ছিল খুবই কম। ধানমন্ডি হকার্সের মমতাজ তাঁত সেন্টারের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর সরদার জানান, সংঘাত শুরুর পর থেকে সপ্তাহখানেক ধরে কোনো বেচাকেনা নেই। এমনিতেই ইদানীং শাড়ির বিক্রি তুলনামূলক কম, এখন এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে শাড়ি কিনতে কে আসবেন? মানুষ এখন জরুরি দরকারের জিনিসপত্র, ভোগ্যপণ এসবই কিনছেন। পোশাক-আশাকের ব্যবসা একেবারে পড়ে গেছে।
গাউছিয়া মার্কেটে এখন শাড়ির দোকানের চেয়ে বোরকা-হিজাব, থ্রি-পিস, থান কাপড়ের দোকানই বেশি। আরাবিয়ান বোরকা হাউসের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানা বলেন, তাঁদের দোকানে খুচরা ও পাইকারি দুই ধরনের কেনাবেচা হয়। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত সৃষ্টির পর থেকে পাইকারি বিক্রি একেবারেই বন্ধ। কারফিউ উঠে গেলেও খুচরা বিক্রি তেমন হচ্ছে না।
প্রধান প্রধান সড়কে দোকানপাট পাঁচটার মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। তবে পাড়া-মহল্লায় রাত প্রায় আটটা পর্যন্ত মুদিখানা, স্টেশনারি, হার্ডওয়্যারের দোকান, রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকান খোলা দেখা গেছে।
ছুটির দিনে পথে সকাল থেকেই রাস্তাঘাটে লোক তেমন দেখা যায়নি। বিকেল থেকে প্রায় নির্জন হয়ে পড়ে মহানগরের রাস্তা।