ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ ভাঙচুর, অধিকাংশ হল আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ দেখিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ সংগঠনের অনেক নেতার হলের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বের করে দিয়ে অধিকাংশ হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, হলের ভেতর ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে হলে হলে প্রাধ্যক্ষদের ‘চাপ’ দিয়েলিখিত বিজ্ঞপ্তি লিখিয়ে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার পর রোকেয়া হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের অবরুদ্ধ করে মারধর ও পরে হলছাড়া করা হয়। গভীর রাত পর্যন্ত ছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে প্রাধ্যক্ষ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন।
রোকেয়া হলের ঘটনার পর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য হলেও।
রাতের মধ্যেই ছাত্রীদের অন্য ৪টি হলে (শামসুন্নাহার হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, কবি সুফিয়া কামাল হল ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল) ছাত্রীরা বের হয়ে এসে প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর নেন।
রাতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসহ বিভিন্ন হলে। জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগকে বের করে দিয়ে ফটকের ভেতর বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে স্বাক্ষর নেন।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল ও অমর একুশে হলেও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তবে এই তিন হলে গত সোমবার বিকেল থেকে ছাত্রলীগকে ঢুকতে দিচ্ছেন না আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দুদিন আগে এসব হলে ছাত্রলীগ নেতার কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
আজ বুধবার ভোর চারটার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি বলেন, ‘সবাই সংঘবদ্ধ থাকুন। যদি কোথাও কোনো বাধা আসে, তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবিলা করব। এখন থেকে হল পরিচালনা করবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বাধা আসলে বাধবে লড়াই।’
আজ সকালেও শিক্ষার্থীরা হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া অব্যাহত রাখেন। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের হলের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
পরে তানভীর হাসানের হল কবি জসীমউদদীন হল থেকে ছাত্রলীগকে বের করে দেন আন্দোলনকারীরা। সকাল ১০টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা মাজহারুল কবিরের হল মাস্টারদা সূর্যসেন হলের নিয়ন্ত্রণ নিতে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের ভিসি চত্বরের দিকে ধাওয়া দেন আন্দোলনকারীরা।
স্যার এ এফ রহমান হলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও বিজয় একাত্তর হলে সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের কক্ষ আজ ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা স্যার এ এফ রহমান হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল থেকেও ছাত্রলীগকে বের করে দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় সব কটি হলেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপরও তাঁদের আন্দোলনকারী বলা হাস্যকর। আন্দোলনের নামে ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডাররা এ ধরনের হামলা চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সহিষ্ণু আচরণ করেছেন। সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কারও সঙ্গে সংঘাতে যাননি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) হল খালি করার নির্দেশনা দেওয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আগেই হল ছেড়েছেন। তাঁরা সংঘাত এড়াতে চেয়েছেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হল ত্যাগ করেছেন। কিন্তু হল ত্যাগ করার সময় এবং জামাকাপড়-বইপত্র ইত্যাদি গোছানোর সময় অনেক হলেই আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হামলা করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে, বইপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে।’