সিএজির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন, দেশের হিসাব ও নিরীক্ষা কার্যক্রম স্থবির

ক্যাডার কর্মকর্তারা কাকরাইলে অডিট ভবনের ভেতরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান। আজ রোববার রাজধানীর কাকরাইলেছবি: দীপু মালাকার

অডিটরদের বেতন গ্রেড বৃদ্ধির আন্দোলন ঘিরে ক্যাডার ও নন–ক্যাডার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে সরকারের হিসাব ও নিরীক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এর জেরে আজ রোববার দুই পক্ষই মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।

এর মধ্যে ক্যাডার কর্মকর্তারা কাকরাইলে অডিট ভবনের ভেতরে এবং নন–ক্যাডার কর্মচারীরা (অডিটর) ভবনের সামনের সড়ক প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। নন–ক্যাডার কর্মচারীরা কয়েক দফায় অডিট ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। পরে ভবনের ফটকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

তিন ঘণ্টা ধরে কাকরাইলে এই সড়কটি অবরোধ করে রাখায় আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তাঁদের সড়কের এক পাশে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার অনুরোধ জানানো হলেও তাঁরা সড়কে অবস্থান থেকে সরেননি। পরে এক পর্যায়ে লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে তাঁদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।

পরে বিকেল পাঁচটায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন অডিটররা। আগামীকাল সোমবারও বিক্ষোভ করবেন বলে জানান। সেগুনবাগিচায় সিজিএ কার্যালয় চত্বরে এই কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে আসা কর্মচারীরা অংশ নেবেন বলে ঘোষণা দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অডিটররা আন্দোলনে নামেন। একাদশতম গ্রেডে কর্মরত অডিটররা দশম গ্রেডে পদোন্নতি চান। তাঁদের দাবি, হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও ৩ হাজার ৩৮২ জন অডিটরের মধ্যে অন্তত ৬৩৬ জনকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। বাকিদের একাদশতম গ্রেডে রেখে বৈষম্য করা হচ্ছে।

নন–ক্যাডার কর্মচারীরা (অডিটর) অডিট ভবনের সামনের সড়ক প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। আজ রোববার রাজধানীর কাকরাইলে
ছবি: দীপু মালাকার

অডিটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার পতনের পর প্রথম সপ্তাহে ক্যাডার কর্মকর্তাদের একটি অংশ সিএজি নূরুল ইসলামকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ উল্লেখ করে তাঁর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করে। তখন অডিটররা (নন–ক্যাডার) সিএজির পক্ষে অবস্থান নেন। তখন সিএজি অডিটরদের দশম গ্রেডে উন্নীত করতে যা যা প্রয়োজন, তা–ই করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এ নিয়ে তিনি অডিটরদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন। পরে এই গ্রেড পরিবর্তনের সিএজি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পাঠান।

সিএজি কার্যালয় সূত্র জানায়, এই প্রস্তাব অর্থ বিভাগে গিয়ে আটকে যায়। এরপর অডিটররা প্রথমে অর্থসচিবের পদত্যাগ দাবি করেন। সর্বশেষ আজ সিএজির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন।

অন্যদিকে গ্রেড পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠানোর ঘটনায় আগে থেকেই সিএজির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন ক্যাডার কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, নন–ক্যাডার কর্মচারীদের ভয়ে কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যেতে পারছেন না দুই সপ্তাহ ধরে। তাঁরা আজ সিএজি কার্যালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করেন। আর কার্যালয়ের বাইরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন অডিটররা।

জলকামান ব্যবহার ও লাঠিপেটা করে অডিট ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। আজ রোববার রাজধানীর কাকরাইলে
ছবি: দীপু মালাকার

আন্দোলনকারী অডিটররা জানিয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দশম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার জন্য আন্দোলন করছিলেন। এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলে হাইকোর্ট তাঁদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রথম দফায় রিটকারী ৬১ জনকে কেবল দশম গ্রেড প্রদান করা হয়। কিছুদিন পর আবার আবেদন করা আরও ৫৭৫ জনকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। আরেকটি সূত্র বলছে, এই ৬৩৬ জনের বাইরে আরও ২৭৭ জনকেও দশম গ্রেড দেওয়া হয়েছে। ফলে একই পদে দুই ধরনের বেতন গ্রেড থাকায় বৈষম্য তৈরি হয়।

অন্যদিকে ক্যাডার কর্মকর্তারা বলছেন, সিএজি নূরুল ইসলাম স্বপদে থাকতে সমর্থনের বিনিময়ে একাদশতম গ্রেডের অডিটরদের দশম গ্রেড, দশম গ্রেডের সুপারদের নবম গ্রেড এবং নবম গ্রেডের নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাদের সপ্তম গ্রেড উন্নীতকরণের প্রতিশ্রতি দেন। আর বিসিএস নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারের কর্মকর্তারা অন্যান্য ক্যাডারের মতো নবম গ্রেডে কর্মজীবন শুরু করেন। এতে কর্মস্থলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে দাবি করে ক্যাডার কর্মকর্তাদের বড় একটা অংশও সিএজির পদত্যাগ দাবি করছেন।

এই বিষয়ে সিএজির বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন এবং খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

দুই পক্ষের এমন অবস্থানের কারণে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের হিসাব ও নিরীক্ষা কার্যক্রম। জরুরি দু–একটি কাজ ছাড়া তাঁরা স্বাভাবিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না।