আগারগাঁওয়ে ‘হলিডে মার্কেট’ চালু
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) উদ্যোক্তাদের পণ্য নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ‘হলিডে মার্কেট’ চালু করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে এই মার্কেটের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
ডিএনসিসি ও ঐক্য ফাউন্ডেশনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের পণ্য নিয়ে পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে মার্কেটটি চালু করা হয়েছে।
মার্কেটটি বসেছে আগারগাঁওয়ের শেরে বাংলা নগরের পর্যটন ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন ভবন পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কে। এটি আইসিটি সড়ক নামে পরিচিত।
প্রতি সপ্তাহের ছুটির দিনে (শুক্র-শনিবার) সড়কটির উত্তর ও দক্ষিণ— দুই পাশের বিস্তৃত গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে মার্কেটের স্টল বসবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এ রকম ছোট ছোট মার্কেট চালু করা গেলে উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়বে। এ ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিলে ভালো হবে। এতে নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। যার মাধ্যমে সমাজ এগিয়ে যাবে, দেশ এগিয়ে যাবে।
উদ্যোগটিতে যাতে কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। অব্যবস্থাপনা রোধে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে হলিডে বা ইভেনিং মার্কেট রয়েছে। এ মার্কেটে ছুটির দিনে বা সন্ধ্যার সময় স্টল বসে। সে ক্ষেত্রে ছুটির পরের দিন সকালে বা কর্মদিবসের দিনে সব ফাঁকা হয়ে যায়। এ রকম মার্কেটে বড় বিপণিবিতানের তুলনায় কিছুটা কম দামে জিনিসপত্র কেনা যায়। এটাই হলিডে মার্কেটের সুবিধা।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব উদ্যোক্তা এখানে এসেছেন, স্টল দিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের হাতে পণ্য তৈরি করেন। তাই এখানে ভেজাল পণ্য বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। নিজেদের তৈরি বা উৎপাদিত পণ্য তাঁরা নিজেরাই বিক্রি করেন।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, হলিডে মার্কেটের একপাশে একটি ‘কালচারাল কর্নার’ থাকবে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলবে। যাঁরা মার্কেটে আসবেন, তাঁরা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এখানে মন খুলে সাংস্কৃতিক যেকোনো পরিবেশনা করতে পারবেন।
পরীক্ষামূলক উদ্যোগটি সফল হলে ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে এমন ‘হলিডে মার্কেট’ চালু করা হবে বলে ঘোষণা দেন আতিকুল ইসলাম।
সরেজমিন দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে ৫০টি করে মোট ১০০টি স্টল বসানো হয়েছে। স্টলগুলোতে এসএমই উদ্যোক্তাদের চামড়াজাত, পাটজাত, লাইফস্টাইল, ফ্যাশন, হোম ডেকর, হস্তশিল্প, অরগানিক, কৃষি ও খাদ্যপণ্য রয়েছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে নার্সারি।
বিভিন্ন ধরনের চাল, ডাল, তেল, ঘি, মধু, মসলা, শুঁটকির মতো পণ্য নিয়ে স্টল দিয়েছেন উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকার উদ্যোক্তা জেসমিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘দেশীয় বিভিন্ন কৃষি ও খাদ্যপণ্য নিয়ে আমি কাজ করি। মসলার উপাদান সংগ্রহ করে নিজেরাই মসলা তৈরি করি। নিজেদের ঘানিতে শর্ষে ভাঙিয়ে তেল তৈরি করি। আমাদের এখান থেকে ক্রেতারা নিরাপদ ও প্রাকৃতিক খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।’
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষ করা বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে এসেছেন কুব্বাত হোসাইন। তাঁর দোকানে চেরি টমেটো, বিট রুট, লেটুস পাতা, ব্রকলিসহ নানান ধরনের শীতকালীন সবজি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০০৪ সাল থেকে অরগানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছি। হলিডে মার্কেট আমাদের মতো ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে ক্রেতাদের একটি সেতুবন্ধ তৈরি হবে বলে বিশ্বাস করি।’