দুই ঈদ পার, তবু সরেনি কারওয়ান বাজারের কাঁচামালের আড়ত

কারওয়ান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ কাঁচামালের আড়ত থেকে গত পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর ব্যবসায়ীদের গাবতলীতে যাওয়ার কথা ছিল। 

যাত্রাবাড়ী পাইকারি কাঁচাবাজার। কারওয়ান বাজার ব্যবসায়ীরা সেখানে যেতে চেয়েছেন। তবে সেখানে কিছু দোকান ও জায়গা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছেছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর কারওয়ান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা এবং ব্যবসায়ীদের গাবতলীতে  স্থানান্তর করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। গত ১৮ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এর পর পার হয়েছে দুই ঈদ। তবে কারওয়ান বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙা—কোনোটিই করতে পারেনি ঢাকা উত্তর িসটি (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। 

এ বিষয়ে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ব্যবসায়ীদের অজুহাতের শেষ নেই। তাঁদের নতুন বায়না, তাঁরা যাত্রাবাড়ীতে যাবেন; কিন্তু সেখানে কিছু দোকান ও পণ্য ওঠানো-নামানোর জায়গা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছে। সেগুলো উচ্ছেদ হলেই স্থানান্তরের কাজ শুরু হবে। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, যাত্রাবাড়ীতে যে ব্যবসায়ীরা আছেন, তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত। ওই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাও যাতে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন, সেই পরিবেশ তৈরির কাজ চলছে। এ ছাড়া ট্রাক থেকে পণ্য নামানো ও ওঠানোর জায়গা প্রস্তুত করা হচ্ছে। 

১৮০৪ ব্যবসায়ীকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা

‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রথমে ২০০৬ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজার স্থানান্তর। ওই প্রকল্পের আওতায় বর্তমান ঢাকা উত্তর সিটির মহাখালী ও গাবতলীতে (আমিনবাজার) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির যাত্রাবাড়ীতে পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ করা হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় হয় ২০৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। 

পরে ২০১১ সালের নভেম্বরে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভেঙে পৃথক দুটি (ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ) সিটি করপোরেশন হলে প্রকল্পের দায়িত্ব পায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সালে মহাখালী ও গাবতলীর আমিনবাজারের পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণকাজ শেষ করে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। তবে বাকি ছিল যাত্রাবাড়ীর কাজ। পরে ২০১৭ সালের এপ্রিলে একনেকে তিনটি কাঁচাবাজার নির্মাণের দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদিত হয়। তখন প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় দুটিই বাড়ে। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। 

তিনটি কাঁচাবাজারে ১২০ থেকে ১৩০ বর্গফুট আকারের ২ হাজার ৯৩৯টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী যাত্রাবাড়ীতে ৮৯৫ জন ব্যবসায়ীকে, গাবতলীতে ৫৪৯ জনকে এবং মহাখালীতে ৩৬০ জনকে অর্থাৎ মোট ১ হাজার ৮০৪ জন ব্যবসায়ীকে কারওয়ান বাজার থেকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। 

যা বলছেন ব্যবসায়ীরা 

প্রাথমিকভাবে কারওয়ান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ কাঁচামালের আড়ত ভবন থেকে ১৭৬টি এবং অস্থায়ী টিনের ছাউনিতে থাকা ১৮০টি দোকানের ব্যবসায়ীদের গাবতলীর আমিনবাজার কাঁচাবাজারে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ডিএনসিসির কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি করা হয়। দফায় দফায় সভা করার পরও স্থানান্তরের কাজ এগোয়নি।

কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, গাবতলীকে যেন কাঁচা সবজির জন্য বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা যায়, পুনর্বাসনটা যেন আশানুরূপ হয়, এর জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছিল। সরকার চাইছে ঢাকার অভ্যন্তরে কোনো পাইকারি কাঁচাবাজার থাকবে না। তাই মিরপুরের মাজার রোড এবং রায়েরবাজারের সাদেক খান কাঁচাবাজার অপসারণ করতে বলা হয়েছিল। সিটি করপোরেশন এর সমাধান করছে না। 

‘সময়ক্ষেপণ করতেই ভিন্ন ভিন্ন দাবি’

স্থানান্তর নিয়ে সময়ক্ষেপণ করতেই ব্যবসায়ীরা একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন দাবি হাজির করছেন বলে মনে করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মেয়র গত মার্চে চূড়ান্ত ভাবে ঈদের পরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা ও ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর শুরুর ঘোষণা দেন। এর পরেই ব্যবসায়ীরা যাত্রাবাড়ীতে যাওয়ার বাহানা শুরু করেন। 

ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা এখন গাবতলীর আমিনবাজারের পরিবর্তে যাত্রাবাড়ী যাবেন। তাঁদের ইচ্ছা অনুযায়ী যাত্রাবাড়ীতে দোকানের বরাদ্দপত্র দেওয়া হয়েছে।