ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতিতেও মশকনিধনে ‘গাফিলতি’

মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মশকনিধনকর্মীদের দেখা পাওয়া যায়নি। অথচ সিটি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ওষুধ ছিটানোর কথা
ফাইল ছবি

মশা মারার ওষুধ ছিটানো নিয়ে মশকনিধনকর্মীদের বিরুদ্ধে কাজে গাফিলতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হলেও ‘গাফিলতি’ বন্ধ হচ্ছে না। মশকনিধনকর্মীরা নিজেদের ‘খেয়ালখুশিমতো’ ওষুধ ছিটিয়ে তাঁদের দায় সারছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মশকনিধনকর্মীদের দেখা পাওয়া যায়নি। অথচ সিটি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ওষুধ ছিটানোর কথা।

সেগুনবাগিচা, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গুলিস্তানের একাংশ, সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট ক্যাম্পাসের একাংশ নিয়ে ওই ওয়ার্ড গঠিত। এ ওয়ার্ডে মশকনিধনের বিষয়টি দেখভাল করেন সফিউল ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে মশকনিধনকর্মীরা মশক মারার ওষুধ ছিটানোর কাজ শেষ করেছেন। ওষুধ ছিটানো হয়েছে সেগুনবাগিচা এলাকায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৪ জন। একই সময়ে মারা গেছেন ৭ জন। এ বছর দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে এই সময়ে। এ মাসের ১১ দিনে ডেঙ্গুতে ৩৬ জনের মৃত্যু হলো। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৮৩ জন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, একজন মশকনিধনকর্মীকে প্রতিদিন সকালে ৫০ মিলিলিটার ওষুধ দেওয়া হয়। প্রতি ১০ মিলিলিটার ওষুধ ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ছিটাতে হয়। মশকনিধনকমীরা কাঁধে যে যন্ত্রটি (স্প্রে মেশিন) বহন করেন, এই যন্ত্রে প্রতিবার ১০ লিটার করে পানি নেওয়া যায়। এভাবে পাঁচবার পানিতে ওষুধ মিশিয়ে সে পানি ছিটাতে হয় তাঁদের।

সফিউল ইসলাম দেড় ঘণ্টায় ওষুধ ছিটানোর কাজ শেষ করার কথা বললেও তাঁর অন্য সহকর্মীরা বলছেন ভিন্ন কথা। দক্ষিণ সিটির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মশকনিধন সুপারভাইজার হাসান ওয়াকিল খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর এলাকায় প্রতি ১০ লিটার ওষুধ ছিটাতে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট সময় লাগে। সেই হিসাবে ৫০ মিলিলিটার ওষুধ ছিটাতে প্রায় পৌনে চার ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়।

২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মশকনিধন সুপারভাইজার ইমরান হোসেনের কাছে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হলে বা পাশাপাশি স্থাপনায় প্রতি ১০ লিটার ওষুধ ছিটাতে ৩০ মিনিট সময় লাগে। তবে ১০ লিটার ওষুধ ছিটাতে গড়ে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। সে হিসাবে সকালে যে ওষুধ দেওয়া হয়, তা শেষ করতে পৌনে চার ঘণ্টা সময় লাগে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ সিটির স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তাও প্রথম আলোর কাছে সকালের ওষুধ শেষ করতে পৌনে চার ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানান। কিন্তু মঙ্গলবার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ওষুধ ছিটানোর কাজ শেষ করেছেন মশকনিধনকর্মীরা, এই বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, তাহলে তাঁরা কাজে ‘গাফিলতি’ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবিরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যতক্ষণ ওষুধ থাকে, ততক্ষণই ছিটানো হয়। তাঁর ওয়ার্ডের পরিস্থিতি অন্য ওয়ার্ডের চেয়ে ভালো বলে দাবি করেন তিনি।

গত ১৫ দিনে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক ঢাকা দক্ষিণ সিটির তিনটি ওয়ার্ড ঘুরে মশা মারার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম সরেজমিনে দেখেছেন। তাতে দেখা যায়, মশকনিধনকর্মীদের ওষুধ ছিটাতে সিটি করপোরেশন থেকে যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেই সময় ওষুধ ছিটানোর কাজ হচ্ছে না। এ ছাড়া মশকনিধনকর্মীদের উপস্থিতিতেই বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ করেন। কাউন্সিলরের সামনেও মশকনিধনকর্মীদের ওষুধ ছিটানোর কাজে গাফিলতি বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ করতে দেখা যায়।  

‘সিটি করপোরেশনের গাফিলতির কারণে রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে’ দাবি করে ক্ষুব্ধ এক বাসিন্দা মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলো কার্যালয়ে ফোন করে বলেন, ‘ডেঙ্গুতে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে আর দুই সিটির মেয়র ঘুমাচ্ছেন।’ তাঁর দাবি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে হিসাব দিচ্ছে, তার চেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন ও মারা যাচ্ছেন।