সরকারি জমি কীভাবে তাদের হলো, সেই ব্যাখ্যা দিল পুলিশ

কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে এখনো দেয়াল নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মুখে ওই জমি নিয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তারা বলেছে, সরকারি সব বিধি অনুসরণ করেই সরকারি এই সম্পত্তি কলাবাগান থানার জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে কলাবাগান থানার জন্য ধানমন্ডি মৌজার শূন্য দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭–এর সব বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়েছে। কলাবাগান থানার জন্য অধিগ্রহণ করা শূন্য দশমিক ২০ একর জমি জরিপ অনুযায়ী সরকারি সম্পত্তি ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন।

আরও পড়ুন

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে রাজউকের কোনো আপত্তি নেই মর্মে ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরেরও অনাপত্তি পাওয়া গেছে। স্থানীয় সাংসদ ওই জমিতে এলাকাবাসীর নিরাপত্তার সুবিধার্থে স্থায়ীভাবে কলাবাগান থানা স্থাপনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দেন।

আরও পড়ুন

ঢাকার পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের উল্টো দিকের গলির মুখে খোলা জায়গাটি তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবে পরিচিত। সেখানে স্থানীয় শিশুরা খেলাধুলা করে, ঈদের নামাজ, জানাজাসহ স্থানীয়দের নানা সামাজিক আয়োজন হয়ে থাকে। ওই জমিতে কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় গত রোববার স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে ধরে নিয়ে প্রায় ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হয়। মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে ওই দিন মধ্যরাতে মা–ছেলেকে ছাড়া হয়।

ওই জায়গায় থানা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ–সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার বিভিন্ন সংগঠনসহ মানবাধিকারকর্মীরা। দেশের বিশিষ্টজনেরাও গতকাল বিবৃতি দিয়ে খেলার মাঠে থানা নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। থানার জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। মা–ছেলেকে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রাখারও কঠোর সমালোচনা করেছেন লেখক–অধ্যাপক–সংস্কৃতিকর্মীসহ দেশের বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা।

শিশুদের খেলার মাঠে থানা না করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন নাগরিক অধিকার রক্ষায় সচেতন ব্যক্তিরা
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

নানা মহল থেকে প্রতিবাদের মুখে গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও বলেছেন, থানার জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করতে মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পরে আলোচনা করে ওই জায়গার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। তাঁর এই ঘোষণার পরও সেখানে কাজ বন্ধ করেনি পুলিশ। গতকাল অধিকারকর্মীদের বিক্ষোভের মধ্যেই সেখানে পুলিশের পাহারায় নির্মাণকাজ চলে। আজও কাজ চলতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন

প্রতিবাদকারীরা বলছেন, শিশুদের খেলার বিকল্প জায়গা না দিলে ওই মাঠে থানা ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ বলেছে, বিকল্প খেলার মাঠ ব্যবস্থার বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত নয়। তবে খেলার মাঠের বিষয়ে একটি পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত থানার জায়গা তেঁতুলতলা মাঠ হতে কিছুদূরে কলাবাগান মাঠ রয়েছে। সেখানে বাচ্চাদের খেলাধুলাসহ সামাজিক অনুষ্ঠান করার সুযোগ রয়েছে।’

এই জমিতে থানা ভবন নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনাপত্তিপত্র পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তবে গতকাল এক সাক্ষাৎকারে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেছেন, তেঁতুলতলা মাঠটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ২০১৬-৩৫ সালের জন্য নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) মাঠ হিসেবে চিহ্নিত আছে। সেখানে থানা ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে পুলিশই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে।

আরও পড়ুন