সমুদ্রসম্পদ আহরণে ভৌগোলিক তথ্যব্যবস্থা সুগঠিত করতে হবে

বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা
ছবি: সংগৃহীত

সমুদ্রসম্পদ আহরণে ভৌগোলিক তথ্যব্যবস্থা সুগঠিত করার ওপর জোর দিয়েছেন বক্তারা। তাঁরা বলেছেন, রিমোট সেন্সিং ও জিআইএসের মতো প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ভৌগোলিক তথ্য ও সমুদ্রে মাছের বিচরণক্ষেত্র নির্ণয় করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্পারসোর মিলনায়তনে এ সেমিনার হয়।

‘রিমোট সেন্সিং ও জিআইএস প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের ভৌগোলিক তথ্যব্যবস্থা এবং সমুদ্রে মাছের বিচরণক্ষেত্র সনাক্তকরণ পদ্ধতি স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের ফলাফল তুলে ধরতেই এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে স্বাগত ভাষণ দেন স্পারসোর চেয়ারম্যান মো. জাফর উল্লাহ খান। প্রকল্পসংক্রান্ত টেকনিক্যাল প্রেজেন্টেশন দেন এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুস ছালাম।

সেমিনারে প্রকল্পের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত বিরাট জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। প্রায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, নদী ও উপকূলীয় এলাকার ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা এবং লবণাক্ততা উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত জনগণের অর্থনৈতিক সমস্যাকে আরও তীব্র করে। উপকূলভিত্তিক টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি তাই গুরত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত চর ও দ্বীপগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হলেও এদের বেশির ভাগেই উল্লেখযোগ্য কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে সমুদ্রসীমা অর্জনের পর সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দেশের উপকূলীয় চর ও দ্বীপগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। উপকূলের চর ও দ্বীপগুলোর আয়তন ও আকার-আকৃতি, জোয়ার-ভাটায় প্রাপ্ত দশা, মাটির গুণাগুণ, ভূমির স্থায়িত্ব, আবহাওয়া, দুর্যোগপ্রবণতার বিষয়টি মাথায় রেখে এই প্রকল্পের মাধ্যমে দূর অনুধাবন প্রযুক্তিতে প্রস্তুত করা ভিত্তিমূলক ও চলমান ভৌগোলিক উপাত্তসম্ভার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া স্থাপিত এ ভৌগোলিক তথ্যব্যবস্থা সার্বিকভাবে উপকূলীয় এলাকার আকার-আকৃতিগত পরিবর্তনের ওপর নিয়মিত নজরদারি এবং এসব এলাকার উন্নয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে। এ প্রকল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল, দূর অনুধাবন প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে সমুদ্র এলাকায় মাছের বিচরণক্ষেত্র সনাক্তকরণ পদ্ধতিটি স্থাপন।

সেমিনারের সভাপতি ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসম্পদ আহরণ, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসহ উপকূলের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্পারসোর এ প্রকল্পের ফলাফলসমূহ (তথ্য-উপাত্ত) নিয়মিতভাবে প্রতি ছয় মাস অন্তর অংশীজনদের সরবরাহ করা হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত ‘ব্লু ইকোনমি’–সংক্রান্ত কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে। এটি জাতীয় অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের তালিকায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। তিনি বলেন, সমুদ্রে মাছের বিচরণক্ষেত্র সনাক্তকরণের জন্য দূর অনুধাবন প্রযুক্তির প্রয়োগ করে স্যাটেলাইট উপাত্ত সংগ্রহ করার মাধ্যমে প্রতিদিন সমুদ্রে মাছের বিচরণক্ষেত্র চিহ্নিতকরণের যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা সত্যি প্রশসংনীয় ও সময়োপযোগী।

স্পারসোর চেয়ারম্যান জাফর উল্লাহ খান বলেন, এ প্রকল্প চলেছে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। এ প্রকল্পে ব্যয় ছিল সাড়ে তিন কোটি টাকা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে স্পারসো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এবং মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ ও আনুষ্ঠানিক সভার মাধ্যমে কাজ চলেছে। এর মাধ্যমে সময়, অর্থসাশ্রয় ও আন্তপ্রতিষ্ঠান সমন্বয়ের এক অনন্য মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক মুহম্মদ আবদুর রউফ হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. নিয়ামুল নাসের প্রমুখ।