শাহবাগ শিশুপার্ক খুলছে না আগামী তিন বছরেও

আড়াই বছর ধরে শিশুপার্কটি বন্ধ। সংস্কার নিয়ে এখনো জটিলতা কমেনি। ফলে কাজই শুরু হয়নি।

শাহবাগের শিশুপার্কের পুরো এলাকাটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার।
ছবি: সাইফুল ইসলাম

রাজধানীর শাহবাগে সরকারিভাবে চালু হওয়া দেশের প্রথম শিশুপার্কটি গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে। এতে বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু–কিশোরেরা। প্রকল্প অনুমোদনসংক্রান্ত জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত নতুন করে শিশুপার্কের উন্নয়নে কাজই শুরু হয়নি। আগামী তিন বছরেও এই পার্ক চালুর সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এত দিনে হয়তো পার্কটি চালু হয়েছে—এমন ধারণা থেকে সন্তানদের নিয়ে প্রতিদিনই পার্কে আসছেন অনেকে। তবে এটি চালু না হওয়ায় আক্ষেপ নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা। যেমন গত সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পার্কে এসেছিলেন সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।

২০১৯‍ সালের জানুয়ারি মাসে পার্কের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে এটি বন্ধ ঘোষণা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিশুপার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন থাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। একই সময়ের মধ্যে শিশুপার্কেরও সংস্কারকাজ শেষে এটি খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে বরাদ্দ নিয়ে জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত পার্কের কাজ শুরুই হয়নি। অন্যদিকে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়েছে।

প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশুপার্কটির আধুনিকায়নের কাজটি করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর জন্য স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের মূল বরাদ্দ ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা থেকে ৭৮ কোটি টাকা দক্ষিণ সিটিকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শুরু থেকেই বরাদ্দ নিয়ে আপত্তি জানায়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বলা হয়, শিশুপার্কের বিদ্যমান রাইডগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, নতুন রাইড বসাতে হবে। রাইড বসানো এবং পার্কের উন্নয়নে এই বরাদ্দ অপর্যাপ্ত। এ নিয়ে চিঠি চালাচালির পর সাত মাস আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দক্ষিণ সিটিকে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুপার্কের আধুনিকায়ন করতে বলা হয়।

পরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সংস্থার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পাঠানো প্রকল্পটি এ বছরের মধ্যে অনুমোদন হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে পার্কটি চালু করার লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা কাজ করবেন। সেই হিসেবে ২০২৫ সালের আগে শিশুপার্ক চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

সংস্থার যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যাবে। এরপর এটি অনুমোদনের পর অর্থ ছাড় হলে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া ও পার্কের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ শুরু হবে।

পার্ক সংস্কার ও চালু করা নিয়ে জটিলতা আরও আছে। আগে শিশুপার্কটি যে জায়গায় ছিল, তার বেশির ভাগ অংশেই স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ভুগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ চলছে। এ জন্য আগের জায়গায় শিশুপার্ক করা সম্ভব নয়। আবার শাহবাগ থানার অবস্থান কোথায় হবে, তা–ও ঠিক করতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিকল্পনাতেই বড় দুর্বলতা আছে। শুরু থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও নেওয়া পরিকল্পনায় বড় গলদ ছিল। এ জন্য পুরো ঢাকায় শিশু–কিশোরদের জন্য একমাত্র বিনোদনকেন্দ্রের আজ এই অবস্থা হয়েছে। পার্কটি বন্ধ করার আগেই ঠিক করা দরকার ছিল যে কবে নাগাদ চালু করা যেতে পারে। ঢাকায় যেহেতু অবসর কাটানোর জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে, সেহেতু বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করে এটি চালু করা উচিত।