মাস্ক ছাড়া বাজারে এসে গুনলেন জরিমানা
হার্ডওয়্যারের দোকান সুমাইয়া ট্রেডিংয়ের সামনে বসে আছেন দুজন। দোকানি ভেতরে বসা। তিনজন মিলে আড্ডা দিচ্ছেন। অথচ কারোর মুখে মাস্ক নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত মাস্ক নেই কেন, জানতে চাইলে তিনজনই নানা অজুহাত দেন। তাঁরা বলেন, কেউ ভাত খেয়ে এসেছেন, কারও দম আটকে আসে। এ সময় ইউসূফ আলম, মো. মজিদ ও রাজিব হাসান—এই তিনজনের প্রত্যেককে ২০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কাব্যকস সুপারমার্কেটের নিচতলায় আজ শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্যবিধিবিষয়ক অভিযান চালানো হয়। আশপাশের এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা হচ্ছে, তা তদারকি করতে এ অভিযান চলে। এ সময় পথচারী, বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের অপরাধের মাত্রা বুঝে জরিমানা করা হয়। তবে অভিযান শেষে একই স্থানে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের বেশির ভাগের মুখে মাস্ক নামানো। কারও কারও মুখে মাস্কই নেই।
দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১০ জানুয়ারি ১১টি বিধিনিষেধ জারি করে। ১৩ জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। সরকারি বিধিনিষেধের দশম দিন ছিল আজ। এ নির্দেশনা কার্যকর করতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়।
বিকেল চারটা থেকে কারওয়ান বাজারে অভিযান শুরু হয়। বাজারের কিচেন মার্কেট, সবজি বাজার ও কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়তে অভিযান চলে। অভিযানে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। তবে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত আসার খবরে তাঁরা পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরেন। আদালতের মুখোমুখি হলেই মাস্ক না পরা নিয়ে তাঁরা নানা অজুহাত দেন।
কাঁচাবাজারে ধনেপাতা বিক্রি করেন ৩২ বছর বয়সী মো. মহিম। তিনি মাস্কটি পাশের একটি তারে ঝুলিয়ে ক্রেতার সঙ্গে কথা বলছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত মাস্ক নেই কেন, জিজ্ঞেস করতেই মহিম বলেন, একটু আগে খাওয়া-দাওয়া শেষে দোকানে এসেছেন। এ কারণে তিনি মাস্ক পরেননি। তিনি সব সময় মাস্ক পরেন বলে দাবি করেন। এ সময় তাঁকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়তের সামনে দাঁড়িয়ে হিসাব করছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি জাকির হোসেন। মাস্ক পরেননি কেন, জানতে চাইলে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতকে বলেন, ‘মাস্ক ধুয়ে দিয়েছি। সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মাস্ক নিতে মনে নেই।’ সারা দিন মাস্ক না পরে ঘোরার অপরাধে তাঁকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
বাংলামোটর থেকে বাজারে মুরগি কিনতে এসেছেন মো. নজরুল নামের এক তরুণ। অথচ তাঁর মুখে কোনো মাস্ক নেই। মাস্ক ছাড়া ঘুরছিলেন তিনি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়লে নজরুল বলেন, ‘ভুলে গেছি’। তাঁকেও ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
মাস্ক না পরার অপরাধে কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন মার্কেট, আড়তের ১৬ জনকে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ২৬৯ লঙ্ঘনের অপরাধে জরিমানা করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১০ দিনে অভিযান চালিয়ে দেখা যাচ্ছে, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা হলেও মানছেন।
তবে তা পর্যাপ্ত নয়। অভিযানের মাধ্যমে মানুষ অবশ্য জানছে প্রশাসন কঠোর আছে।
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে ও অবহেলাজনিতভাবে এমন কোনো কার্য করে, যার দ্বারা জীবন বিপন্নকারী কোনো রোগের সংক্রমণ বিস্তার লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যার দ্বারা জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রমণ বিস্তার লাভ করতে পারে বলে সে জানে বা তার বিশ্বাস করার কারণ আছে তাহলে সে ব্যক্তি ৬ মাস পর্যন্ত যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ড বা জরিমানাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
ইয়াসির আরাফাত বলেন, অভিযানে নামলে দেখা যায়, মানুষ মাস্ক পরছে। অভিযান শেষে আবার যা আগের অবস্থা সেটাই থাকে। অভিযান, জরিমানা বা শাস্তি দিয়ে মানুষকে সচেতন করা যাবে না। মানুষকেই এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
টিকা সনদ দেখছে না রেস্তোরাঁগুলো
বিকেল পাঁচটার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত কারওয়ান বাজারের আল সাফিন রেস্তোরাঁয় ঢোকেন। এ সময় রেস্তোরাঁতে একজন ক্রেতা খাবার খাচ্ছিলেন। আদালত রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায়, ক্রেতাকে রেস্তোরাঁয় ঢুকতে দেওয়া বা খাবার পরিবেশনের আগে টিকার সনদ দেখা হচ্ছে কি না। এ সময় রেস্তোরাঁটির কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁরা টিকা সনদ দেখার বিষয়টি জানতেন না। এ অপরাধে আল সাফিন রেস্তোরাঁকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ রাজধানীর মিরপুর, পান্থপথসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালিত হয়। এসব অভিযানে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাস্ক না পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে ১২২ জনকে ৬৭ হাজার ৭০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন। অভিযানের পাশাপাশি বিনা মূল্যে মাস্কও বিতরণ করা হয়।