মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদকারী মা-ছেলেকে ৮ ঘণ্টায়ও ছাড়েনি পুলিশ
রাজধানীর কলাবাগানে খেলার মাঠে ভবনের নির্মাণের প্রতিবাদ করায় সকালে সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর প্রায় আট ঘণ্টা পার হলেও তাঁদের ছাড়া হয়নি।
এই মা–ছেলেকে কলাবাগান থানায় আটকে রাখা হয়েছে। সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেউঁতি শাহগুফতা রোববার সন্ধ্যায় অভিযোগ করেন, তাঁর মায়ের সঙ্গে তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, সকাল ১১টার দিকে আটক করে নিয়ে তাঁর মাকে প্রথমে থানার হাজতখানায় রাখা হয়েছিল। পরে মা সেখানে খারাপ লাগার কথা বললে তাঁকে থানার একটি কক্ষে এনে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে নারী পুলিশ সদস্যদের পাহারায় রাখা হয়েছে।
ভাই এইচএসসির ছাত্র জানিয়ে শেউঁতি শাহগুফতা বলেন, তাঁর বয়স এখনো ১৮ বছরের কম। তাঁকে হাজতখানায় আটকে রেখেছে পুলিশ।
ঘটনা সম্পর্কে শেউঁতি শাহগুফতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় অন্যদের সঙ্গে আমার মা আন্দোলন করে আসছিলেন। গত রাতে মাঠে ইট-সুরকি ফেলছিল পুলিশ। সকালে মা মাঠের সামনে গিয়ে ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। তখন তাঁকে আটক করা হয়। পরে আমার ভাই বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এলে তাঁকেও ধরে নিয়ে যায়।’
কলাবাগান এলাকার খোলা একটি জায়গা তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবে পরিচিত। শিশুদের খেলাধুলার পাশাপাশি সেখানে ঈদের নামাজ, জানাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক আয়োজন হয়। স্থানীয় লোকজন জায়গাটি মাঠ হিসেবেই ব্যবহার করে আসছেন। ওই মাঠে কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। গত ৪ ফেব্রুয়ারি পান্থপথের কনকর্ড টাওয়ারের সামনে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানার ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়। ‘কলাবাগান এলাকাবাসী’র ব্যানারে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে স্থানীয় শিশু-কিশোর ও এলাকাবাসী অংশ নেন।
ওই মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না বলেছিলেন, মাঠটি রক্ষার দাবিতে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের কার্যালয়েও চিঠি দিয়েছেন। এলাকার সাংসদ আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন। কিন্তু এখন শিশুদের যাতায়াতই বন্ধ করা হয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেছেন, মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে জোরালো ভূমিকা রাখছিলেন সৈয়দা রত্না। সে কারণেই তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ।
মা–ছেলেকে আটকের বিষয়ে জানতে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্রের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি ধরেননি। এ বিষয়ে পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শরিফ মো. ফারুকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় লোকজন ও শিশুদের এনে কাজে বাধা দেওয়ার কারণে দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে কোনো অপরাধ পেলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।
এই জমিতে থানা ভবন নির্মাণের বিষয়টি সামনে এসেছিল ২০২০ সালের আগস্টে। সে সময় ঢাকা জেলা প্রশাসনের এক নোটিশে জমিকে পতিত হিসেবে উল্লেখ করে কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণের প্রস্তাবের কথা জানানো হয়। ওই নোটিশ দেওয়ার পর থেকেই স্থানীয় লোকজন জায়গাটিকে মাঠ হিসেবেই রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন।
এর মধ্যে গত ৩১ জানুয়ারি কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে খেলতে যাওয়া কয়েক শিশুর কান ধরে ওঠবস করায় পুলিশ। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।