প্রতিবছরের মতো এ বছরও পবিত্র রমজান মাস শুরুর এক-দুই দিন আগে বাজারে বিভিন্ন সবজি, মুরগি ও গরুর মাংস এবং ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়ে গিয়েছিল। বাড়তি দাম ছিল বেশির ভাগ নিত্যপণের। রমজানে দাম বেড়ে গেছে মাছেরও। রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে যে দামে বিভিন্ন মাছ বিক্রি হয়েছিল, রোজা শুরুর পর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ওই মাছগুলো এখন কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
অস্বস্তির খবর এই যে দাম বেড়ে যাওয়া বিভিন্ন সবজি, মুরগি ও গরু মাংস এবং ফার্মের মুরগির ডিমের দাম গত বৃহস্পতিবার থেকে কিছুটা কমলেও মাছ বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পুকুরে চাষের মাছগুলো রোজা শুরুর আগের দামের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সাগর ও নদীর মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্রেতার উপস্থিতি বুঝে অনেক অসাধু বিক্রেতা অহেতুক বেশি দাম চান। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এই দুই বাজারের খুচরা মাছ বিক্রেতারা দাম বাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। অনেকে বলেন, প্রতিবছর এ সময়ে বাজারে মাছের সরবরাহ কিছুটা কম থাকে। তাই দাম একটু বাড়ে। অনেকে আবার বলেন, নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মাছের দামও বেড়ে গেছে। কেউ কেউ জানান, রোজায় মাছের চাহিদা কিছুটা কমে। তাই সরবরাহও কমিয়ে দেওয়া হয়। দাম বাড়ার এটাও কারণ। এ ছাড়া শুক্র ও শনিবার বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক বিক্রেতা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন।
সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ দামে একটু কম, এমন মাছ কেনেন। গতকাল বেলা ১১টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে কিছুটা কম দামের তেলাপিয়া, পাঙাশ, কই, ছোট রুই (নলা), কার্প ও সরপুঁটি মাছ আগের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এই বাজারে গতকাল তেলাপিয়া ১৭০-১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। রোজা শুরুর আগেও তা ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া পাঙাশ মাছ গতকাল ১৪০-১৫০ টাকা, ১৬০-১৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া কই (চাষের) ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ছোট আকারের রুই (নলা) ১৭০-১৮০ টাকায়, কার্প মাছ ১৮০-২০০ টাকায় এবং সরপুঁটি ১৮০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়।
ওই বাজার থেকে এক কেজি তেলাপিয়া মাছ কেনেন মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মিতা বেগম। মিতা বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও (১ এপ্রিল, রোজা শুরুর দুই দিন আগে) একই আকারের এক কেজি তেলাপিয়া ১৫০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। মাছগুলো তাজা ছিল। আজকে মরা তেলাপিয়া ২০ টাকা বেশি দামে ১৭০ টাকায় কিনতে হয়েছে।’
রোজায় মাছ বিক্রি কিছুটা কমলেও দাম উল্টো বেড়েছে—জানালেন ওই বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিবছর এ সময় বাজারে মাছের সরবরাহ কমে। এটা মৌসুমের কারণেও হয়, আবার রোজার কারণেও হয়। ফলে বিক্রি কম হলেও দাম বেড়ে যায়।
পুকুরে চাষ হয় এমন অন্য মাছও গতকাল আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজারে মাছের দাম বেশি। গতকাল বিকেলে কারওয়ান বাজারে রুই মাছ (মাঝারি আকারের) ২৫০-৩০০ টাকা, পাবদা ৩৭০-৪০০ টাকা, শিং ৫০০-৫৫০ টাকা, মাগুর ৪০০-৪৫০, ট্যাংরা ৫৫০-৫৮০ টাকা, কালবাউশ (মাঝারি) ২৮০-৩০০ টাকা, শৈল (বড়) ৫৫০-৫৮০ এবং টাকি মাছ ২৮০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
অন্যদিকে নদী কিংবা সাগর থেকে ধরা মাছের দামও কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া ওজনভেদে ইলিশ মাছ আগের চেয়ে কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে জাটকা রক্ষায় পালিত ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২২’ (৩১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত) পালনের কারণেও ইলিশের দাম বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান। আর ইলিশের সরবরাহ কমে যাওয়া এবং বাজারে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে নদী ও সাগরের মাছের দাম বেড়েছে বলেও জানান বিক্রেতারা।
গতকাল সকালে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ও বিকেলে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বড় ইলিশ (এক কেজি) ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি।
এ ছাড়া প্রতিটি বড় আকারের (৪ কেজি ওজন) বোয়াল ৭৫০-৮০০ টাকা, মাঝারি আকারের (২ কেজি ওজনের) বোয়াল ৬০০-৬২০ টাকা, বড় আইড় ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, মাঝারি আকারের আইর ৭০০-৭৫০ টাকা, বড় চিতল ৭০০-৭৫০ টাকা, পোয়া (মাঝারি) ৫৫০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে চিংড়ির মধ্যে দেশি চিংড়ি (মাঝারি ও ছোট) ৬৫০-৭০০ টাকা, হরিণা চিংড়ি ৬০০-৬৫০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬৫০-৭০০ টাকা এবং গলদা চিংড়ি ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজার থেকে গতকাল বিকেলে মাছ কেনেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সিয়াম আহমেদ। তিনি বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্রেতার উপস্থিতি বুঝে অনেক অসাধু বিক্রেতা অহেতুক বেশি দাম চান। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।