মডার্নার টিকা কীভাবে হাতে এল জানালেন গ্রেপ্তার বিজয় কৃষ্ণ
রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে গ্রেপ্তার বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার পুলিশকে বলেছেন, মডার্নার টিকাগুলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ছিল। তবে তিনি ওই টিকা পান ইউনিটি থ্রু পপুলেশন সার্ভিসেস (ইউটিপিএস) নামের একটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে।
১৮ আগস্ট রাতে দরিদ্র পরিবার সেবা ক্লিনিক নামের একটি প্রতিষ্ঠানে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে, এমন খবর পায় পুলিশ। ওই সময় সেখানে গিয়ে তারা টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষারত কয়েকজনকে দেখতে পান। পরে ক্লিনিকটি থেকে পুলিশ দুই ভায়াল মডার্নার টিকা ও বেশ কিছু খালি বাক্স জব্দ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিজয় সে সময় পুলিশকে জানান, তিনি এক ডোজ টিকার বিনিময়ে ৫০০ টাকা নিচ্ছিলেন। এরপর পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের দুই দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে আজ বুধবার। আগামীকাল তাঁকে আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ইউটিপিএসকে তিনটি ওয়ার্ডে করোনার টিকা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। আর ইউটিপিএস দায়িত্ব দিয়েছিল তিনটি প্রতিষ্ঠানকে। তার মধ্যে তাঁর মালিকানাধীন দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থাও ছিল। তিনি পেয়েছিলেন সাড়ে ৪০০ ভায়াল। সেখান থেকে অল্প কিছু সরিয়েছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, টিকা দেওয়া শেষে ভায়ালগুলো বাক্সসহ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা। বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের কাছ থেকে পাওয়া কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে, তিনি ভায়ালগুলো ইউটিপিএসকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ইউটিপিএসও বুঝিয়ে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে। তাহলে দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা থেকে ভায়াল পাওয়া গেল কী করে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিজয় কৃষ্ণ পুলিশকে বলেছেন, তিনি ইউটিপিএস থেকে পাওয়া ভায়ালের কিছু সরিয়েছেন। কিছু নষ্টও করেছেন। কাগজপত্রে সই করেছেন বিজয়কৃষ্ণ তালুকদারের স্ত্রী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য আদালতকে জানাবে পুলিশ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ফেরত যাওয়া ভায়ালগুলো ঠিকঠাক গোনা হলে আসলে কী ঘটেছে, নিশ্চিত হওয়া যাবে। তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আজিজ ইউটিপিএসের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তবে ইউটিপিএসের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোর কাছে দায় অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, গণটিকা দেওয়ার মতো সক্ষমতা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নেই। সেটা তাঁরা পরিষ্কারভাবেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছিলেন। তারপরও তাঁকে ৩টি ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থাকে তাঁরা নিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির অভিজ্ঞতা দেখে। তারা উত্তরায় মা ও শিশুদের টিকা দেওয়ার কাজ করছিল দুই বছর ধরে। ইউটিপিএস ওই সংস্থাসহ বাকি প্রতিটি সেন্টার থেকে প্রতিদিন হিসাব নিয়েছেন এবং সিটি করপোরেশনকে হিসাব বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দিক থেকে কোনো গরমিল হওয়ার সুযোগ নেই।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এসব তথ্যের সত্যতা আলাদাভাবে যাচাই করা হয়নি।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন আটটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় ৭ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত করোনার টিকা দিচ্ছিল। এই সংস্থাগুলো প্রয়োজনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিতে পারে। তবে তাদের নির্ধারিত পাঁচ দিনের মধ্যেই টিকা দিয়ে শেষ করার কথা। প্রায় এক সপ্তাহ পর ওই টিকা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্ধারিত সময়ের পর দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা টিকা নিয়ে কী করছিল, সে বিষয়ে ইউটিপিএসকে জবাবদিহি করতে হবে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ভায়ালগুলো গুনে ফেরত নিয়েছিল কি না, সেটা খুঁজে পেলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তাঁরা।