বিবাহিত ছাত্রীর সিট বাতিল সভ্য নিয়ম হতে পারে না: কাবেরী গায়েন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহিত ছাত্রীদের আবাসিক হলের সিট বাতিল করার নিয়মের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারপারসন ও লেখক-গবেষক কাবেরী গায়েন।
নারীর অধিকার নিয়ে সোচ্চার এই অধ্যাপকের মতে, এটা কোনো সভ্য নিয়ম হতে পারে না। দ্রুত এই নিয়মের অবসান হওয়া দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পাঁচটি হলে আসন বণ্টনসম্পর্কিত নীতিমালার একটি ধারায় বলা আছে, ‘কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তাঁর সিট বাতিল হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে চলতি সেশনে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।’ বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বেশ আলোচনা–সমালোচনা চলছে।
অধ্যাপক কাবেরী গায়েন আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। আজ বুধবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যখন ছাত্রী ছিলেন, তখনো বিবাহিত ছাত্রীদের ক্ষেত্রে ওই নিয়ম ছিল। ছাত্রাবস্থায় তাঁরা নিয়মটির বিরোধিতা করেছেন। ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে কাবেরী গায়েন বলেন, ‘তখন বিয়ে হলেই মেয়েদের হলের সিট কাটা যেত। বলা হতো, হলে সিট–সংকট আছে। যে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তাঁর তো ঢাকাতেই বাসা আছে। যেসব মেয়ের ঢাকায় বাসা থাকত না, তাঁদের খুবই অসুবিধা হতো।’
কাবেরী গায়েন বলেন, কোনো ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে কিছু সমস্যা থাকে। হলে অন্য যে মেয়েরা থাকেন, তাঁদের ঝামেলা হতে পারে। তবে একজন শিক্ষার্থী তো শিক্ষার্থীই।
কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ শিক্ষার্থী হন এবং হলে আসন পেয়ে থাকেন, সেটা তো সেই জায়গা থেকেই দেখা উচিত। ছেলেদের হলে অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী থাকেন, যাঁদের অনেকে বাবাও হয়ে গেছেন, সেগুলো নিয়ে কোনো কথা হয় না। সেই মেয়েটিই হলে থাকতে আসেন, যাঁর যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকে না। সেদিক থেকে বলতে গেলে এটা তো আসলে কোনো সভ্য নিয়ম হতে পারে না। অবশ্যই এই নিয়মের অবসান হওয়া দরকার।
গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বরাবর দেওয়া এক আবেদনে পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের ক্ষেত্রে ‘থাকা’ নিয়মটি বাতিলসহ চার দফা দাবি জানান। উপাচার্য তখন ছাত্রীদের বলেছিলেন, হল কর্তৃপক্ষ ও ডিনস কমিটির সভায় আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোনো পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত এই নিয়মই বলবৎ থাকবে।
ছাত্রীদের অন্য তিন দাবি হলো—শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষায় সব ছাত্রী হলে ‘লোকাল গার্ডিয়ান’ বা ‘স্থানীয় অভিভাবকের’ পরিবর্তে ‘ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট’ বা ‘জরুরি যোগাযোগ’ শব্দটি রাখা; আবাসিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেকোনো ধরনের হয়রানি ও অসহযোগিতামূলক আচরণ বন্ধ করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া; এবং শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা সাপেক্ষে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহাল করা ও জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের হলে অবস্থান করতে দেওয়া।