বইমেলায় এসে গুনলেন জরিমানা
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির বইমেলায় করোনা বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত হতে অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ শনিবার দুপুরের দিকে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় দর্শনার্থী ও প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধিদের অপরাধের মাত্রা বুঝে অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে অভিযান শেষে অভিযানস্থলে গিয়ে দেখা যায় আগের চিত্র। বইমেলায় ঢোকার সময় দর্শনার্থীদের মুখে মাস্ক নিশ্চিত করা গেলেও ভেতরে দর্শনার্থীদের অনেকের মুখে মাস্ক থাকছে না। থাকলেও কারও মাস্ক ঝুলছিল থুতনি ও গলায়।
বইমেলা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলায় অংশ নিতে হবে দর্শনার্থীদের। আর বই বিক্রেতার জন্য বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, টিকা সনদ যাচাইয়ের নির্দেশনা দিয়েছিল মেলা কর্তৃপক্ষ। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বইমেলায় স্বাস্থ্যবিধি কার্যকরবিষয়ক অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। কারও কারও সঙ্গে মাস্ক থাকলেও, তা মুখে না রেখে পকেটে রেখেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দূর থেকে দেখেই পকেট ও ব্যাগ থেকে মাস্ক বের করে পরতে দেখা গেছে দর্শনার্থী অনেককে। আদালতের মুখোমুখি হলেই তাঁরা নানা অজুহাত দিচ্ছিলেন।
রায়হান হোসেন ও নাফিসা তারান্নুম নামের দুই তরুণ-তরুণী মাস্ক না পরেই বইমেলায় ঘুরছিলেন, বই কিনছিলেন। এ সময় তাঁরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে এসে পড়েন। মাস্ক নেই কেন, আদালতের এমন প্রশ্নে রায়হান বলেন, ‘ভুলে হয়ে গেছে।’ এ সময় তাঁদের দুজনকে ২০০ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ২০০ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে তরুণ ব্যবসায়ী মো. নাঈম ও তাঁর সঙ্গে থাকা ফারজানা চৌধুরীকেও। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দেখে নাঈম পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরে ফেলেন। আদালত জানতে চাইলে নাঈম বলেন, তাঁরা ছবি তুলছিলেন দেখে মাস্ক খুলে রেখেছিলেন।
এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রকাশনীগুলোর স্টল ঘুরে দেখেন। স্টলগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা মাস্ক পরছেন কি না, তা পর্যবেক্ষণ করেন।
বইমেলায় হওয়া এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা রানী কর্মকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মানুষকে সচেতন করতেই এ অভিযান। ছুটির দিন হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে বইমেলায় অনেকেই আসছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, বইমেলায় প্রবেশের সময় মাস্ক পরেই ঢুকছেন। তবে ভেতরে ঢোকার পরে কেউ কেউ মাস্ক খুলে পকেটে রাখছেন, পকেটে রাখছেন।
মনীষা রানী কর্মকার বলেন, অপরাধবুঝে দণ্ড দেওয়া হচ্ছে। যেসব প্রকাশনা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন তাঁদের ধন্যবাদ দেওয়া হচ্ছে।
বেলা একটার দিকে ভ্যালেন্টিনো প্রকাশনীতে গিয়ে দেখা যায়, এর একমাত্র বিক্রয় প্রতিনিধি মো. বিল্লালের মুখে কোনো মাস্ক নেই। মাস্ক পরেননি কেন, জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে বিল্লাল বলেন, তাঁর ঠান্ডার সমস্যা আছে। মুখে মাস্ক পরে থাকলে তিনি শ্বাস নিতে পারেন না।
বিল্লালকে স্টল ছেড়ে বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিতে বলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাঁকে বলা হয়, ভ্যালেন্টিনো প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মো. জায়েদকে ফোন করে জানাতে, যেন তিনি অন্য একজনকে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে স্টলে পাঠান। বিল্লাল ফোন করে প্রকাশনার স্বত্বাধিকারীকে এ ব্যাপারে অবহিত করেন।
তবে বেলা পৌনে তিনটার দিকেও ভ্যালোন্টিনো প্রকাশনীতে গিয়ে দেখা যায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা মো. বিল্লাল মানেননি। তিনি তখনো স্টলটির দেখভাল করছিলেন।
বেলা একটার দিকে বাংলা প্রকাশ প্রকাশনীর সামনে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখতে পান, এর বিক্রয় প্রতিনিধিসহ ১০ জন কর্মীর মধ্যে তিনজনের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না। মুখে মাস্ক না থাকা এক নারী বিক্রেতার কাছে মুখে মাস্ক নেই কেন, জানতে চাওয়া হলে তিনি তখন মাস্ক খুঁজতে শুরু করেন। পকেট থেকে মাস্ক বের করে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতকে বলেন, ‘ছবি তোলার জন্য মাস্ক খুলে রেখেছিলাম।’ অথচ তাঁরা কোনো ছবি তুলছিলেন না।
এ সময় বাংলা প্রকাশের বিপণন ব্যবস্থাপক নূরন্নবী চৌধুরীর মুখেও কোনো মাস্ক ছিল না। স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে বাংলা প্রকাশকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে বেলা তিনটার দিকেও ওই স্টলে গিয়ে দেখা যায়, তখনো প্রকাশনাটির দশজন বিক্রয় প্রতিনিধির মধ্যে তিনজনের মুখে মাস্ক নেই। এমনকি ব্যবস্থাপক নূরন্নবীর মুখের মাস্কও থুতনিতে নামানো।
দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১০ জানুয়ারি ১১টি বিধিনিষেধ জারি করে। ১৩ জানুয়ারি থেকে এ বিধিনিষেধ কার্যকর হয়। এ নির্দেশনা কার্যকর করতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে।
বইমেলার অভিযানে স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে ছয়জনকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়।