আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার মানুষের কোনো নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এমনকি মানুষের উৎসবগুলো পর্যন্ত অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এই সরকার থাকার আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, সেই প্রশ্ন রেখেছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা৷
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘জনতার অবস্থান’ শীর্ষক এক সমাবেশে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই প্রশ্ন তোলেন। দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলা ও রাজনৈতিক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধের আহ্বানে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন বলেন, দেশে যে ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে, তারা সচেতনভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে লালন-পালন করে টিকে আছে। কুমিল্লার ঘটনাটি সাজানো, তা শিশুরাও বুঝতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে শাসকগোষ্ঠী নানা হিসাবনিকাশ মেলাচ্ছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করতে চাইছে।
ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি অনিক রায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন। কিন্তু ৫০ বছরেও তা হয়নি। এই ব্যর্থতা শাসকগোষ্ঠীর, যারা ৫০ বছরের শাসনে দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ করতে পারেনি। যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের জনগণের উৎসবের নিরাপত্তা দিতে পারেন না, সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গণভবন-সচিবালয়ে সভায় বসার কতটুকু যোগ্যতা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হয়। যে সরকার বাজারে, বাড়িতে, উৎসবে কোথাও মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেই সরকার থাকার আদৌ প্রয়োজন আছে কি?
কর্মসূচিতে সিপিবি নেতা বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনা ও এর জেরে অন্যান্য জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনগুলো কী করছিল? ধর্মের নামে এত বড় অধর্ম হলো, ধর্মবিশ্বাসী মুসলমানেরা কী করছিলেন? এসব সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত প্রতিরোধ গড়তে হবে।
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।’ সিপিবির আরেক নেতা জলি তালুকদার বলেন, সারা দেশে যে তাণ্ডব হয়েছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তা সম্ভব নয়। এর জবাব সরকারকে দিতে হবে। কোনো মানুষকে তারা নিরাপত্তা দিতে পারছে না। আজকের পরিস্থিতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
কবি রহমান মফিজ বলেন, ‘গত কয়েক দিনের বর্বরতা আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। আমাদের অসাম্প্রদায়িকতার গর্ব আসলে মিথ্যা বুলি। প্রতিবছর শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দাঁড়াতে হয়। আর কতকাল দাঁড়াতে হবে, জানি না। সাম্প্রদায়িক শক্তি কায়েমি স্বার্থ হাসিলের জন্য এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটায়। সাধারণ মানুষ এসব হামলায় জড়িত নন। সামনে ভারতের ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচন সামনে রেখে কোনো খেলা এখানে হচ্ছে কি না, সেটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে।’
অ্যাকটিভিস্ট মার্জিয়া প্রভার সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উদীচীর সংগঠক আরিফ নূর বক্তব্য দেন।