ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস বন্ধ করতে বলল হেফাজত
ফ্রান্সে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর অবমাননার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ–সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সমাবেশে সংগঠনের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস বন্ধ করতে হবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে ক্ষমা চাইতে হবে।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় ‘ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও’ কর্মসূচি শেষে এক সমাবেশে জুনায়েদ বাবুনগরী এসব কথা বলেন।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বক্তব্য দেন জুনায়েদ বাবুনগরী। সেখানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশে বলেন, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে অবমাননার জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে মুসলিম বিশ্বের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। যত দিন ক্ষমা চাইবে না, তত দিন পর্যন্ত ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত রাখতে হবে। তিনি অনতিবিলম্বে মহানবীকে অবমাননার প্রতিবাদে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
হেফাজতের মহাসচিব বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সরকার আরও ১০০ বছর ক্ষমতায় থাকুক। কিন্তু আমাদের দাবি পূরণ করে ক্ষমতায় থাকতে হবে। সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শুকরিয়া আদায় করছি। আপনাদের কথা রক্ষা করে এখানেই থেমে গেলাম। প্রয়োজনে আগামী কর্মসূচিতে এখানে থামব না।’
হেফাজতের মহাসচিব আরও বলেন, ‘সরকার নবীর বন্ধু, আমরা নবীর বন্ধু। হেফাজতে ইসলামের আরও দাবি আছে, সেগুলো পূরণ করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী মহানবী (সা.)–র অবমাননার ঘটনায় সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ফ্রান্সে হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে অবমাননার প্রতিবাদে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ হয়েছে। অথচ সরকার নীরব। এই নীরবতার রহস্য কী, জনগণ জানতে চায়।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ফ্রান্সে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন এবং এর সমর্থনে দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর ‘কট্টর’ অবস্থানের প্রতিবাদে ঢাকায় ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। বেলা ১১টায় কর্মসূচি থাকলেও সকাল ১০টা থেকেই সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। ১১টার আগেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর পাশের সড়কের পুরানা পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলা পর্যন্ত, পল্টন, মুক্তাঙ্গন, বিজয়নগর সড়ক নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
এই কর্মসূচিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানীতে সতর্ক অবস্থান নেয়। পুলিশ পুরানা পল্টন, নূর হোসেন চত্বর, নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইলে বিচারপতি ভবনে সামনে ব্যারিকেড দিয়ে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ করে দিয়ে মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয়। এ সময় আশপাশের সড়কগুলোয় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হলে মানুষ দুর্ভোগে পড়ে।
সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররম থেকে একটি মিছিল বারিধারায় ফ্রান্স দূতাবাসের উদ্দেশে রওনা হয়। মিছিল আটকাতে আগেই পুলিশ শান্তিনগরে ব্যারিকেড দেয়। কিন্তু হেফাজতের কর্মীরা ব্যারিকেড তুলে নিয়ে মিছিলসহ মৌচাকের দিকে এগিয়ে যান। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে তাঁরা আবার শান্তিনগর ফিরে আসেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা জুনাইদ আল হাবীব, মাওলানা যোবায়ের আহমদ প্রমুখ।