চতুর্থ দিনে রাস্তায় গাড়ি-মানুষ-রিকশা কিছুটা বেড়েছে
সরকারের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগে চাকরি করেন মো. লুৎফর রহমান। আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে রাজধানীর কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ডে তিনি অপেক্ষা করছিলেন অফিসের গাড়ির জন্য।
ওই সময়ই অফিসের গাড়ি ধরতে বেশ দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিলেন মো. আতিকুর রহমান। তিনি একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে অল্প দূরে তাঁর অফিসের গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল, সেটা ধরতেই তিনি একটু দ্রুত হাঁটছিলেন।
কেবল এই দুজন নন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সরকারের কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিনের সকালে রাস্তাঘাটে মানুষ ও যানবাহনের চাপ কিছুটা বেড়েছে। আজ সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশার কিছুটা বাড়তি চলাচলের চিত্র দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চালিয়েছে।
কাজীপাড়ায় যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন রিকশাচালক মো. আলম। তিনি বলেন, ‘সকালবেলা মানুষ অফিসে গেছে, একটু চাপ ছিল। ইনকাম যা হওয়ার সকালেই হইছে। এখন লোকজনের আসা-যাওয়ার চাপ কম। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ঘুরতাছি, কোনো খ্যাপ নাই।’
কারওয়ান বাজারে দাঁড়িয়ে রিকশাচালক মতিউর রহমান জানান, দু–তিন দিনের চেয়ে আজ রাস্তাঘাটে মানুষ একটু বেড়েছে। মানুষের সংখ্যা বাড়লেও ভাড়া সেভাবে বাড়েনি। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সময়ে রিকশা চালিয়ে তিনি ১০০ টাকা ভাড়া পেয়েছেন।
রাস্তায় যানবাহনের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশকে সক্রিয় অবস্থায় দেখা গেছে। মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় কর্মরত অবস্থায় পল্লবী ট্রাফিক জোনের পরিদর্শক বিমল সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে লকডাউন ভাঙার মানসিকতা নেই। যাঁরা বাইরে আসছেন, তাঁরা জরুরি সেবায় নিয়োজিত। তারপরও শুধু জরুরি সেবায় নিয়োজিত লেখা দেখলেই যে ছেড়ে দিচ্ছি, তা নয়; আমরা প্রতিটি গাড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি যে তাদের বাইরে কী প্রয়োজন। সরকারের যে নির্দেশনা আছে, সেটা মেনেই আমরা কাজ করছি। জরুরি সেবার বাইরে কেউ থাকলে তাদের আমরা আইনের আওতায় আনছি।’
পরিদর্শক বিমল সাহা আরও বলেন, ‘এই চেকপোস্টে আমরা সকাল নয়টা পর্যন্ত একটা মামলা করেছি। একটা ব্যক্তিগত গাড়িকে মামলা করা হয়েছে। কারণ, গাড়ির চালক কেন বাইরে বের হয়েছেন, তার সদুত্তর দিতে পারেননি। সরকারি আদেশ অমান্য করার জন্য তাঁকে আমরা ৯২ ধারায় মামলা করেছি।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ১ জুলাই থেকে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। বিধিনিষেধের মধ্যে অনেকের দুমুঠো ডালভাত খেয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন একজন রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা মো. কিরণ মিয়া। ৬০ বছরের কাছাকাছি কিরণ মিয়ার চার মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে, দুই মেয়ে তাঁর সঙ্গেই থাকে। বছরখানেক আগে ভ্যান চালানো ছেড়েছেন। তারপর থেকে কারওয়ান বাজার এলাকায় ফুটপাতে কসমেটিকসের জিনিসপত্র বিক্রি করতেন। কঠোর লকডাউন শুরু হলে কসমেটিকসের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তারপর পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগাতে ঘুরে ঘুরে মাস্ক বিক্রি করছেন। এতে দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়, তা দিয়েই চলছে সংসার।
সকালে কিরণ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন অবস্থা হইছে, পুলাপান নিয়া না খাইয়া থাকার অবস্থা। দোকান লাগামু, পুলিশ ধরে লইয়া যায়। হের লেইগা এগুলি (মাস্ক) বেচতেছি। তারপরও পুলিশ ঝামেলা করে, পলাইয়া পলাইয়া বেচতাছি।’