ঢাকার কচুক্ষেতের দুটি গয়নার দোকানে চুরির ঘটনায় সেখানকার দুজন নিরাপত্তাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আলম ও মনির নামের এই দুজন সেখানে চুরি করার উদ্দেশ্যেই বেস্ট সিকিউরিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছিলেন।
সাত বছর ধরে কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা টাওয়ারে নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে বেস্ট সিকিউরিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস। পুলিশ বলছে, ওই দুজন এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেওয়ার সময় যেসব তথ্য দিয়েছিলেন, সেগুলোর সবই ভুয়া। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রের যে কপি সরবরাহ করেছিলেন, তা–ও নকল। তাঁরা মুঠোফোনে যে নম্বর ব্যবহার করছিলেন, সেগুলোও অন্যের নামে নিবন্ধন করা।
গতকাল শনিবার ভোররাতে রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলায় রাঙাপরী জুয়েলার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের দুটি দোকানে তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে, ভোর সাড়ে চারটার দিকে দুই নিরাপত্তাকর্মী আলম ও মনিরকে ভবনের ভেতরে তিন ব্যক্তিকে ঢুকতে ও বের হতে সহায়তা করতে দেখা গেছে। ঘটনার পর তাঁরা দুজন পালিয়ে গেছেন।
ভাষানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরাপত্তাকর্মী আলম ও মনিরের অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। চুরি করার জন্যই তাঁরা ভুয়া তথ্য দিয়ে এখানে চাকরি নিয়েছিলেন। তাঁরা মোবাইলে শুধু নিজেদের মধ্যেই কথা বলতেন।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি নেওয়ার সময় আলম মাদারীপুর এবং মনির খুলনার ঠিকানা দিয়েছিলেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁরা ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। তাঁরা যেসব নথি দিয়েছেন, সবই ভুয়া। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের খোঁজ না নিয়েই নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠান এর দায় এড়াতে পারে না।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুই নিরাপত্তাকর্মী পরিকল্পনা করেই বেস্ট সিকিউরিটি অ্যান্ড লজিস্টিকসে চাকরি নেন। দেড় মাস আগে নিয়োগ পান আলম। দেড় মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করে গয়নার দোকানে চুরির পরিকল্পনা করেন। নির্বিঘ্নে চুরি করতে চার দিন আগে মনিরও ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সেগুলো অন্যের নামে নিবন্ধন করা। এই নম্বর দুটি থেকে আরও একটি নম্বরে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। ঘুরেফিরে এই তিন নম্বরেই যোগাযোগ করা হতো। ঘটনার পর থেকে এই নম্বরগুলো বন্ধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেস্ট সিকিউরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগের তাঁর সব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত দুজন যেসব তথ্য দিয়েছিলেন, সেগুলোও যাচাই–বাছাই করা হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের দেওয়া সব তথ্য ভুয়া বলে জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, পুলিশকে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কারও সঙ্গে কথা না বলতে পুলিশ পরামর্শ দিয়েছে।
২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত বেস্ট সিকিউরিটি ঢাকাসহ কয়েকটি শহরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহ করে। রাজধানীর ইব্রাহীমপুরে তাদের প্রধান কার্যালয়।
চুরির ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে ভাষানটেক থানায় একটি মামলা করেছেন দোকানের মালিক আবুল কালাম ভূঁইয়া। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর দোকান থেকে ৩০২ ভরি সোনা খোয়া গেছে। এর দাম দুই কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি ৩০ লাখ টাকার হীরা এবং পাঁচ লাখ টাকাও নিয়ে গেছে চোরের দল। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকার মালামাল চুরি হয়েছে।
আবুল কালাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা ঘটনাটি তদন্ত করছে। তবে কোনো সংস্থাই অগ্রগতির খবর জানাতে পারেনি।