আরমানকে মুক্তির নির্দেশ, ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে আইজিপিকে

নির্দোষ আরমান পাঁচ বছর ধরে আরেকজনের সাজা ভোগ করছেন। তাঁকে মুক্তি ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহারেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে

রাজধানীর পল্লবী থানায় মাদকের মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির পরিবর্তে প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাগারে আছেন মো. আরমান। তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরমানকে এক মাসের মধ্যে ২০ লাখ টাকা দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্ট এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারেরও আদেশ দিয়েছেন।

পল্লবীর বেনারসি কারিগর আরমানকে আটক রাখা বেআইনি ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী ঘোষণা করে আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন।

রায়ের অনুলিপি গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে আরমানকে ক্ষতিপূরণ দিতে আইজিপিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে কারাগারে থাকা আরমান এখন কাশিমপুর কারাগার–২–এ আছেন। এর আগে ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে গত বছরের ১৮ এপ্রিল একটি দৈনিক পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে আরমানকে বেআইনিভাবে আটক রাখার বৈধতা নিয়ে তাঁর মা বানু গত বছর হাইকোর্টে রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৯ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। আরমানকে ভুলভাবে আটক রাখা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে রুলে জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

হাইকোর্ট পল্লবী থানার সাবেক চার পুলিশ সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে যুক্ত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই চার কর্মকর্তা হলেন পল্লবী থানার সাবেক ওসি দাদন ফকির (বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক) ও মো. নজরুল ইসলাম (বর্তমানে ঢাকা মহানগর পুলিশের পরিদর্শক) এবং সাবেক উপপরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম খান (বর্তমানে স্পোর্টস অ্যান্ড কালচার ব্রাঞ্চ, পুলিশ সদর দপ্তর) ও মো. রাসেল (বর্তমানে মিরপুর থানার উপপরিদর্শক)।

আরমানকে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুলিশের চার সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া আরমানকে বেআইনি আটকের ঘটনায় দায় নিরূপণে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত করে পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) আগামী ১১ এপ্রিল আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

রায়ের পর আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ঘটনায় দায় নিরূপণে নতুন করে তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরমানকে ভুলভাবে আটকে রাখা শুধু দুর্ঘটনা নয়, বরং সুপরিকল্পিত বলে আদালতের পর্যবেক্ষণে এসেছে। এই ঘটনা সম্মলিতভাবে পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা, যেখানে বিশেষত পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।’

উল্লেখ্য, ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাভোগ করছেন। রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এ মামলার প্রকৃত আসামি। তবে তাঁর পরিবর্তে সাজা ভোগ করছেন আরমান।