চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়: শিক্ষক সমিতির সম্পাদক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিজেকে বাইরে পরিচয় দিতে লজ্জা হয় বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে এমনটি হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল হক এসব কথা বলেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষক সমিতিকে দায়ী করে উপাচার্য শিরীণ আখতারের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ব্যাপারে গত রোববার উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেছিলেন, ‘শিক্ষক সমিতি যদি অযৌক্তিক আন্দোলন না করত, তাহলে ছাত্ররা সাহস পেত না।’
আজকের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আবদুল হক। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষক সমিতির আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার নাম করে নিজেরাই নিজেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। এ ব্যাপারে সমিতির বক্তব্য হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে আসীন দুই ব্যক্তি, সিন্ডিকেট সদস্য, হল প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডি সবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনাচারের দিকে নিয়ে গেছেন। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর কোনো উপায় না পেয়ে সমিতি নিজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে হলেও এ জায়গা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করছে।’
শিক্ষক সমিতির একাংশ এসব আন্দোলন করছে—উপাচার্যের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১১ সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্তকে যাঁরা একাংশের সিদ্ধান্ত মনে করেন, তাঁদের মানসিক অবস্থা কতটা নাজুক, তা সহজে অনুমেয়। তাঁরা বলেছেন (উপাচার্যপন্থীরা) শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে যে প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে তাতে ভাবমূর্তি কেমন হচ্ছে তা বলেননি।’
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সাধারণ ছাত্র বলে সম্বোধন করায় প্রশাসনকে নিন্দা জানান আবদুল হক। তিনি বলেন, ‘কোনো ছাত্রসংগঠনের নাম উল্লেখ না করে সমিতিকে দোষারোপ করছে। এতেই বোঝা যায়, প্রশাসন কতটা অবিবেচক।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করেছে উল্লেখ করে আবদুল হক বলেন, শাটল ট্রেন দুর্ঘটনা কেন্দ্র করে শিক্ষকদের বাস ভাঙচুর, বাসভবন ভাঙচুর, প্রতিনিয়ত মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া, গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, শিক্ষকদের হুমকি দেওয়া ও সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, সহসভাপতি আলা উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ আলী আরশাদ চৌধুরী ও কার্যনির্বাহী সদস্য লায়লা খালেদা প্রমুখ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা। তাঁরা উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি করছেন। যদিও উপাচার্য শিরীণ আখতার দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, তিনি কোনো অনিয়ম করেননি।