যেকোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হলে সরকারি কর্মচারীদের মানতে হবে ৯ নির্দেশনা
সরকারি কর্মচারীদের যেকোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাতে নয়টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চায়, সরকারি কর্মচারীরা যেকোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে যাতে নয়টি নির্দেশনা মেনে চলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে যেসব দিবস বাতিল ঘোষণা করেছে, সেসব দিবসের আগের বছরগুলোর সব স্মারক, ক্রেস্ট, ছবি সব অফিস থেকে অপসারণ করতে হবে।
গত ২৮ অক্টোবর সচিবদের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় সরকারি কর্মচারীদের অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সম্প্রতি মাঠপর্যায়ের কিছু অফিসের কর্মকাণ্ডের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। নির্দেশনায় সচিবসহ দপ্তর-সংস্থার প্রধান এবং মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে কয়েকটি বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিবদের আওতায় যেসব দপ্তর ও সংস্থা রয়েছে এবং মাঠপর্যায়ের অফিসে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা জারি করতে সচিবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাব্বির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি তাঁরা পেয়েছেন। তাঁর মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব সংস্থা ও দপ্তর রয়েছে, সেখানকার কর্মচারীদের উদ্দেশে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, নির্দেশনায় নতুন কিছু নেই। সরকারি কর্মচারীরা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে অনুষ্ঠানে যান। এসব নির্দেশনা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সচিবদের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, একজন কর্মচারী নিজ অধিক্ষেত্রের যেকোনো অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ গ্রহণের আগে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তারপর আমন্ত্রণ চূড়ান্ত করবেন। বিতর্ক এড়াতে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথি সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি অনুষ্ঠানে অতিথি তালিকায় থাকলে ওই অনুষ্ঠান এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আয়োজিত অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র, ব্যানার, প্রচারপত্র, পতাকাসহ যেকোনো ছাপানো কাগজের বর্ণনা, লোগো বা স্লোগানে কোনো আপত্তিকর বা বিতর্ক সৃষ্টিকারী কোনো উপাদান রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করতে হবে। অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে সহায়তা নিতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, নিজস্ব অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র, ব্যানার, চিঠি, ক্রেস্ট, সনদ, ট্রফি ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে, যাতে এসব স্মারকে কোনো ধরনের আপত্তিকর উপাদান না থাকে। মোখলেস উর রহমান বলেন, সরকার গেজেটের মাধ্যমে যেসব দিবস বাতিল ঘোষণা করেছে, সেসব দিবস যাতে পালিত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সরকারি কর্মচারীরা আনুষ্ঠানিক প্রতিটি সভা ও অনুষ্ঠানের জন্য লিখিত বক্তব্য তৈরি করে সে অনুযায়ী পাঠ করবেন। লিখিত বক্তব্যের বাইরে কোনো কথা, স্লোগান, জয়ধ্বনি বলা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের গুজব থেকে নিজে ও নিজ অধিক্ষেত্রের সব সহকর্মীকে দূরে রাখতে হবে।
সচিবদের উদ্দেশে জনপ্রশাসন সচিব আরও লিখেছেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আপনার মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এর আওতাধীন সংযুক্ত দপ্তর ও মাঠপর্যায়ের অফিসের জন্য এসব বিষয়ে অথবা আপনার বিবেচনায় আরও কিছু বিষয় সংযোজিত করে একটি নির্দেশনা জারি করা যেতে পারে। এ নির্দেশনা জারি করা হলে সহকর্মীরা আরও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে যত্নবান হবেন।’
গত ২৬ অক্টোবর যশোরে একটি কারাতে প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৃত্যের সঙ্গে বাজানো গানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম আসে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। ‘শেখ হাসিনা’ নামটি শুনেই জেলা প্রশাসক গান ও নৃত্য বন্ধ করতে বলেন। বন্ধ করার পর তিনি জানতে চান, এই গানে শেখ হাসিনার নাম এল কীভাবে?
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পাঁচজনকে আটক করা হয়। দফায় দফায় ক্ষমা চেয়ে এবং শেষ পর্যন্ত আটকের ৮ ঘণ্টা পর মুচলেকা দিয়ে তাঁরা থানা থেকে ছাড়া পান। সে ঘটনায় জনপ্রশাসনে আলোচনা-সমালোচনা হয়।
এর আগে গত ২৪ অক্টোবর বাগেরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসানের উপস্থিতিতে বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা স্লোগান দেন বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. মো. জালাল উদ্দিন আহম্মেদ। ওই ঘটনায় তাঁকে প্রথমে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ও পরে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, যেকোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সময় সরকারি কর্মচারীরা যাতে আরও সতর্ক থাকেন, সে জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন সব মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা তাঁদের অধীনে থাকা দপ্তর ও সংস্থায় চিঠি দিয়ে এসব নির্দেশনা জানিয়ে দেবেন।