সীমান্তে বড় ধরনের উত্তেজনা নেই, তবে বিজিবি প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহত সাতজনকে আজ অর্থসহায়তা দেয় বিজিবি। অনুষ্ঠান শেষে তাঁদের সঙ্গে অতিথিরাছবি: বিজিবির সৌজন্যে

সীমান্তে বড় ধরনের কোনো উত্তেজনা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ছোটখাটো যে উত্তেজনা আছে, সে জন্য বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) প্রস্তুত আছে। কোনো ধরনের উসকানি এলে তারা তা প্রতিহত করবে।

আজ রোববার বিজিবি সদর দপ্তরে ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের স্বাবলম্বীকরণে বিজিবির সহায়তা প্রদান’ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সীমান্তে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিজিবি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকবে।

সীমান্তবর্তী বাংলাদেশিরা অনেকেই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা (গণমাধ্যম বুঝিয়েছেন) তাদের (সীমান্তের জনগণ) বলবেন, উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আমরা সব রকম নিরাপত্তার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।’

সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে ভারত যদি উত্তেজনা ছড়ায় তাহলে করণীয় কী, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতের জনগণ সেখানে প্রসেশন (মিছিল) করেছে, সেখানে তো বিজিবি প্রসেশন করবে না। করবেন আপনারা, মানে জনগণ। বিএসএফের থেকে কোনো রকম উসকানি থাকলে তার প্রতিকার করবে বিজিবি।’

‘দিল্লি শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে’

এর আগে গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে কবি, চিন্তক ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার বলেন, একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা জয়ী হওয়ার পর এখন সব খুনি আছে ভারতে। যাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ রয়েছে, ভারত তাদের জায়গা দিয়েছে। দিল্লি শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা নিয়েই জায়গা দিয়েছে। এসব জানার পর সৈনিকদের প্রস্তুত করার পরামর্শ দেন ফরহাদ মজহার। ভারত যেন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, দেশ ও জনগণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

র‍্যাবকে বিলুপ্ত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে দাবি জানিয়েছেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘মূল সমালোচনা হচ্ছে সেনাবাহিনীর একজন সদস্যকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনে এমন কিছু কাজ করানো হচ্ছে, যেটা সৈনিক কখনো করে না, সেটা হচ্ছে নিরস্ত্র মানুষকে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করা (বিচারবহির্ভূত হত্যা)। সৈনিক মাত্রই সে সব সময় আরেকজন অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে লড়াই করে। সে কখনো নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে না। কিন্তু এটা আমাদের সংস্কৃতিতে ঢুকেছে।’ তিনি অতি দ্রুত বিজিবিকে ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স ফোর্স আকারে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

‘হাসিনা ফিরলে গণহত্যার আসামি হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে’

অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে হবে গণহত্যার আসামি হয়ে। তাঁকে আগে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, তাঁর জায়গা কাঠগড়া। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার মতো একজন ফ্যাসিস্টকে কোনো রাজনৈতিক দল বিতাড়িত করতে পারেনি। সেটি করে দেখিয়েছে ছাত্র–জনতা। ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। সংগত কারণেই অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বও অনেক বেশি।’

ফ্যাসিবাদের ৬২৬ পৃষ্ঠপোষককে পালাতে কারা সহায়তা করেছে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ অনুষ্ঠানে প্রশ্ন তোলেন, আওয়ামী লীগ নেতাসহ তাঁদের অনেক সহযোগীকে ভারতে পালিয়ে যেতে কারা সহায়তা করেছে? তিনি বলেন, ‘কোর্ট মার্শালকে সামনে রেখে যে মিড লেভেলের অফিসার এবং সৈনিক তখন ছাত্র-জনতাকে সমর্থন করেছিলেন, তাঁদের প্রতি আমাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে। সেই জায়গা থেকে আপনারা নিশ্চিত করবেন এই ৬২৬ জন ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষককে কারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে সেফ এক্সিট করে দিল।...তাদের পেছনে কারা রয়েছে।’

বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত আজকের এই সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। আজ আহত সাতজনকে অর্থসহায়তার পাশাপাশি কাজে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মেজর (অব.) আহমেদ ফেরদৌস, উইমেন সাপোর্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদা হক, আহত ছাত্র-জনতা ও তাঁদের অভিভাবক এবং বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।