‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন প্রণয়নের দাবি নিসচার
সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন একটি আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলনকারী সংগঠন নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ২০১৮ সালে শিক্ষার্থী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস করে। কিন্তু আইনটি আজও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। আইনটিতে সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত। তাঁরা বারবার সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন, আইনটির নাম ‘সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন’ করতে। কিন্তু দুষ্টচক্রের চাপে শেষ পর্যন্ত ‘নিরাপত্তা’ শব্দটি আইনে রাখা হয়নি।
নিসচার চেয়ারম্যান বলেন, তাঁর সংগঠন বর্তমান সরকারের কাছে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন একটি আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, এই আইনে সড়কে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘রোড সেফটি ইউনিট’ (সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট) গঠনের আহ্বান জানান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে শিক্ষাজীবন থেকেই নিজেদের জীবন, অন্যদের জীবন বাঁচানোর কৌশল রপ্ত করতে পারে, সে জন্য রোড সেফটি ইউনিট গঠন করতে হবে।’
সড়ক সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের ‘রোড সেফটি অথোরিটি’ গঠনেরও দাবি জানান নিসচার চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এই অথরিটি (কর্তৃপক্ষ) সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে যা যা করণীয়, তার বাস্তবায়ন করবে।
আক্ষেপ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, অতীতে যখন যে সরকার দেশ পরিচালনা করেছে, স্বভাবতই সড়ক নিরাপত্তার দাবি-দাওয়া নিয়ে তাদের কাছে যেতে হয়েছে। তার মানে এই নয় যে তিনি বা তাঁর সংগঠন সেই সরকারের অংশ। শুধু তাদের আন্দোলন দমিয়ে রাখার জন্য একটি অশুভ চক্র কৌশলে রাজনৈতিক ‘ট্যাগ’ লাগিয়ে দিয়েছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাঁকে বানিয়েছে বিরোধী দলের লোক। এখনো এই ধরনের তৎপরতা চলছে। বলা হচ্ছে, তিনি পতিত সরকারের লোক। অথচ, ৩১ বছর ধরে দেশের মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে গেছে তাঁর সংগঠন। আর সব সরকারের কাছেই তাঁর সংগঠনটি অবহেলিত-নিগৃহীত হয়েছে।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৪ পালন উপলক্ষে অক্টোবর মাসব্যাপী সংগঠনের নানান কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। কর্মসূচির মধ্যে আছে—বিনা মূল্যে হেলমেট বিতরণ, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, শিক্ষার্থী সমাবেশ, সড়ক যোদ্ধাদের মাঝে ‘সেফটি’ জ্যাকেট বিতরণ, স্পিড ব্রেকার-জেব্রা ক্রসিংয়ে রং করা, যানজট নিরসনে ট্রাফিক ক্যাম্পেইন, সড়ক নিরাপত্তা ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন, শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ কর্মশালা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, অভিভাবক সমাবেশ, চালক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, গোলটেবিল বৈঠক ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে নিসচার অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন শোকপ্রস্তাব দেন। এ সময় গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নিসচার অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।