ঢাকা দ্রুতগতির উড়ালসড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণকাজের অংশীদার ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। পক্ষগুলোকে ৩০ মে পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়।
ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার স্থানান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা তুলে দিয়ে ১২ মে রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায় স্থগিত চেয়ে কোম্পানিটির পক্ষে আবেদন করা হয়, যা চেম্বার আদালত হয়ে আজ আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ এবং আইনজীবী ইমতিয়াজ ফারুক। সিনোহাইড্রো করপোরেশনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী এবং ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান চায়না এক্সিম ব্যাংকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান শুনানিতে ছিলেন।
ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির আইনজীবী ইমতিয়াজ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনটি প্রতিষ্ঠান ওই নির্মাণকাজের অংশীদার। তাদের মধ্যে শেয়ারসংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে ইতালিয়ান-থাই হাইকোর্টে সালিসি মামলা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার হস্তান্তরে স্থিতাবস্থা পান। এই স্থিতাবস্থা তুলে দিয়ে ইতালিয়ান থাইয়ের আবেদন খারিজ করে ১২ মে রায় দেন হাইকোর্ট। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে ইতালিয়ান থাই আবেদন করে। আপিল বিভাগ ইতালিয়ান-থাই কোম্পানি শেয়ার অপর দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের ওপর ৩০ মে পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলা হয়েছে। ফলে আপাতত শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না। তবে নির্মাণকাজ চলতে কোনো বাধা নেই।’
তবে চায়না এক্সিম ব্যাংকের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে যেহেতু ইতালিয়ান-থাই অর্থনৈতিকভাবে সংকটাপন্ন কোম্পানি, যে কারণে কোম্পানির শেয়ারগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য দুই শেয়ার হোল্ডারের কাছে হস্তান্তর না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঋণ ছাড় করবে না।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) বড় এই প্রকল্পে বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ডের একটি ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ এবং নির্মাণকাজের মাধ্যমে অংশীদার। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড, চীনের শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড।
এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড নামের কোম্পানি গঠন করে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট। কোম্পানির অংশীদার তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার যথাক্রমে ৫১, ৩৪ ও ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ হলো এক্সপ্রেসওয়ের নির্বাহক প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুসারে, মূল কাঠামো নির্মাণ ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ জোগান দেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আর ২৭ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার, যা ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং (ভিজিএফ) নামে পরিচিত।