রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত পরিবেশবিধ্বংসী ও জনবিরোধী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিলের দাবিতে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘পান্থকুঞ্জ প্রভাতী সংঘ’ ও ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’–এর পক্ষ থেকে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজধানীর পান্থকুঞ্জে ‘পরিবেশ গণহত্যা’ হয়েছে। উন্নয়নের নামে হত্যা করা হয়েছে প্রাণ–প্রকৃতি।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে পান্থকুঞ্জে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশে সূচনা বক্তব্যে গবেষক ও পরিবেশবিদ পাভেল পার্থ বলেন, সৌন্দর্য বর্ধনের নামে দেশি গাছ কেটে নতুন প্রকল্প নেওয়ার উদাহরণ শুধু ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড নয়, সারা দেশে ঘটেছে। ২০০৭ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, এই পান্থকুঞ্জে শুধু উদ্ভিদ প্রজাতি ছিল ৩৫টির বেশি। যার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তিনি বলেন, পরিবেশ গণহত্যা হয়েছে পান্থকুঞ্জে।
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব বলেন, বেশির ভাগ গাছ কাটা হয়েছে ভোরবেলা, রাতের অন্ধকারে। এটা এখন পাখির ডিম ফোটানোর সময়। বন বিভাগ কি পাখি হত্যা করার অনুমতি পেয়েছে? তিনি জানান, ১৫ দিন ধরে কয়েকজন পান্থকুঞ্জে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে প্রকল্প বাতিলের দাবিতে। এ সময় তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে বর্তমান সরকারকে প্রকৃতিবান্ধব বলে প্রত্যাশা করা হলেও আসলে তারা প্রকৃতি নষ্ট করছে, সেসব অভিযোগের কথা।
প্রভাতী সংঘের সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা কে এস আলমগীর জানান, পান্থকুঞ্জ পার্কটি এরশাদ পার্ক নামেও পরিচিত। এখানে নিজেদের খরচে এলাকাবাসী এক হাজার গাছ লাগিয়েছিল। আশপাশের এলাকার শিশুরা এখানে খেলতে আসত। যার সবকিছু নষ্ট হয়ে গেল এক উন্নয়ন প্রকল্পে।
নাগরিক অধিকার কর্মী মিজানুর রহমান বলেন, যে উন্নয়নে পাখি গাছে থাকতে পারে না, মাছ পুকুরে থাকে না, সেটা কি সত্যিই উন্নয়ন? তিনি জানান, তাঁদের এই অবস্থান কর্মসূচির জন্য বর্তমান সরকারের কাছ থেকেও তাঁরা চোখরাঙানি দেখছেন, যা আরও হতাশাজনক। মিজানুর রহমান বলেন, ‘নৈতিক আন্দোলনের ফলে এই সরকার এসেছে, অথচ তাঁরা সবুজ রক্ষা, প্রাণ প্রতিবেশ রক্ষার নৈতিকতা জানে না।’
প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন প্রভাতী সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সিরাজ উদ্দিন তুহিন, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষাকারী আন্দোলনের কর্মী সৈয়দা রত্না।
২০১৮ সালে পান্থকুঞ্জ পার্ক ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি। এর পরই পার্কটির দুরবস্থার শুরু। কাজ শুরুর পরপরই দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা জানতে পারেন, এই পার্কের ভেতরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার বসবে। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানালেও শেষ পর্যন্ত পিলার বসাতে পার্কের একাংশ ছেড়ে দিতে হয়। ছয় বছর ধরে পার্কটি জনসাধারণের জন্য বন্ধ রয়েছে।